মন্থর সমুদ্রস্রোতের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির সম্ভাবনা

মন্থর সমুদ্রস্রোতের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির সম্ভাবনা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ জুলাই, ২০২৪
জলবায়ু-পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে সমুদ্রের সঞ্চালন উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের অনুমান এই ধীরগতির ফলে মহাসাগর বায়ুমণ্ডল থেকে কম কার্বন ডাই অক্সাইড টানবে। এমআইটি গবেষকদের বক্তব্য সমুদ্রের সঞ্চালন ও কার্বন সঞ্চয় করার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। সমুদ্রের সঞ্চালন দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে গভীর মহাসাগর থেকে বায়ুমণ্ডলে আরও কার্বন নির্গমন হতে পারে। সমুদ্রে লোহা, কার্বন ও পুষ্টিকর পদার্থ, পৃষ্ঠের অণুজীব আর “লিগ্যান্ডস” নামে পরিচিত একধরনের স্বল্প-পরিচিত অণু থাকে। যখন মহাসাগর ধীরে ধীরে সঞ্চালিত হয়, তখন এই সমস্ত বস্তুর মধ্যে একটি স্ব-স্থায়ী চক্র গড়ে ওঠে যা কার্বনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
এম আই টির রিসার্চ সায়েন্টিস্ট লডারডেল একটি গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন যেখানে বলা হয়েছে সমুদ্রের পুষ্টিকর পদার্থ, সামুদ্রিক জীব এবং লোহার মিথস্ক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন হল আণুবীক্ষণিক, উদ্ভিদের মতো জীব যা সমুদ্রের পৃষ্ঠে বাস করে, তারা গভীর সমুদ্র থেকে উঠে আসা কার্বন, পুষ্টিকর খাদ্য আর মরুভূমির ধূলিকণা থেকে প্রবাহিত লোহাগ্রহণ করে। যত বেশি ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন বাড়ে তত বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড তারা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে শোষণ করে আর সমুদ্রের কার্বন বিচ্ছিন্ন করতে বড়ো ভূমিকা পালন করে।
লোহা সমুদ্রে অদ্রবণীয়, তাই ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এদের ব্যবহার করতে পারেনা। যখন লিগ্যান্ডের সাথে সংযুক্ত হয় তখন লোহা শুধুমাত্র “উপযোগী” স্তরে দ্রবণীয় হয়, যাতে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন লোহা গ্রহণ করতে পারে। লডারডেল আবিষ্কার করেছেন যে অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণের জন্য সমুদ্রের কোনো অঞ্চলে লোহা যোগ করলে তা অন্যান্য অঞ্চলের পুষ্টি কমিয়ে দেয় ফলে সেই অঞ্চলের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধি হয়না। এতে লিগ্যান্ডের উৎপাদন কমে যায়, আর মূল সমুদ্র অঞ্চলে লোহার সরবরাহ হ্রাস পায়, যার ফলে বায়ুমণ্ডল থেকে অতিরিক্ত কার্বনের পরিমাণ সীমিত হয়ে যায়।
লডারডেল বিভিন্ন প্রচলিত শক্তির অধীনে সমুদ্রের মডেল থেকে জৈবিক কার্যকলাপ এবং কার্বন, পুষ্টি, লোহা এবং লিগ্যান্ডের ঘনত্ব বিশ্লেষণ করেছেন। তাতে তিনি দেখেছেন, সমুদ্রের সঞ্চালন যত দুর্বল হবে, তত কার্বন আর পুষ্টিকর পদার্থের সমুদ্রের গভীর থেকে ওপরে ওঠার পরিমাণ কমবে। তাতে পৃষ্ঠের যে কোনো ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধির জন্য সম্পদের পরিমাণ কম হবে, তার ফলে কম লিগ্যান্ড উৎপন্ন হবে। আবার লিগ্যান্ড কম থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠে কম লোহা ব্যবহারযোগ্য হবে, তাতে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের পরিমাণ কমবে। তার ফলে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ কম হবে আর গভীর সমুদ্র থেকে উর্ধ্বমুখী কার্বন গ্রহণও কম হবে। তার এই গবেষণা নেচার কমিউনিকেশনস-এ প্রকাশিত হয়েছে। লডারডেল বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করতে, নির্গমন কমাতে আমাদের অবশ্যই সক্রিয় হতে কারণ সমুদ্র সঞ্চালনের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে গভীর মহাসাগরে কার্বন সঞ্চয় করার জন্য আমাদের পক্ষে সমুদ্রের ওপর নির্ভর করা সম্ভব নয়।