পৃথিবীর কেন্দ্র : নতুন অনুসন্ধান

পৃথিবীর কেন্দ্র : নতুন অনুসন্ধান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ অক্টোবর, ২০২১

পৃথিবীর কেন্দ্র গঠন ঠিক কেমন?

১৯৫০ এ প্রথমবার এ বিষয়ে প্রথমবার গবেষকেরা বললেন, পৃথিবীর উপরিতলের প্রায় ৩২০০ মাইল নিচে কঠিন ধাতব পদার্থে গঠিত কেন্দ্র গোলাকার। কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি পরিমানের ধাতব পদার্থ হলো লোহা, যা পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মূল চাবিকাঠি। এবং এই কঠিন কেন্দ্রীয় অংশকে ঘিরে রয়েছে তরল ধাতব পদার্থ। ভূকম্পনের ফলে লাভা আকারে যা বেরিয়ে আসে।
হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোয়া স্কুল অফ ওসান অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ভূপ্রাকৃতিবিদ রেথ বাটলার এবং জাপান এজেন্সি ফর মেরিন- আর্থ সায়েন্স অ্যাণ্ড টেকনোলজির গবেষক সেইজি সুবই পূর্ববর্তী ধারণাকে বাতিল করে বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর কঠিন অভ্যন্তরীণ অংশটি তরল, নরম এবং শক্ত কাঠামোর একটি পরিসরে পরিপূর্ণ, যা অন্তত ১৫০ মাইল ছেয়ে আছে কেন্দ্রতম অংশে।
কীভাবে বাটলাররা বললেন একথা?
পৃথিবীর কেন্দ্রের গভীরতা, চাপ, তাপ অত্যন্ত বেশি বলেই তা যন্ত্রের পক্ষেও দুর্গম্য। বাটলার ও সুবই এব্যাপারে নির্ভর করেছেন ভূমিকম্পীয় তরঙ্গের ওপর। বাটলার বলেন, ভূমিকম্পনবিদ্যাই পৃথিবীর কেন্দ্রের গঠন বোঝার একমাত্র পথ। ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বক তথা পৃথিবীর উপরিতলে যে তরঙ্গ এবং পৃথীর পৃষ্ঠদেশের ভূকম্পীয় পর্যবেক্ষনের তথ্যের সাহায্যে নতুন অনুমানে পৌঁছেছেন বাটলাররা।
ভূকম্পীয় তরঙ্গ পৃথিবীর ভেতরের অনেকগুলি স্তর অতিক্রম করেই উপরিতলে আসে। এতে তরঙ্গের গতি বদলায় নানা স্তরে। কেননা, তরঙ্গের গতি, গতির প্রতিসরণ, তার প্রতিফলন কী হবে তা নির্ভর করে স্তরের খনিজ উপাদান, তাপমাত্রা, ও ঘনত্বের ওপর। বাটলার ও সুবই জাপানের আর্থ সিমুলেটর সুপারকম্পিউটার ( ভূকম্পের জন্যে বিশেষ কম্পিউটার) ব্যবহার করে ভূকম্পন পৃথিবীর ভেতরের যে বিন্দু থেকে শুরু হচ্ছে, তার ঠিক উল্টো দিকের বিন্দু বা অংশটি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পাঁচ জোড়া অঞ্চল চিহ্নিত করেন, যে অঞ্চলগুলি পৃথিবীর কেন্দ্রকে সাধারণভাবে ছেয়ে আছে। এই ৫ জোড়া অঞ্চল হলো – ১) টঙ্গা – আলজেরিয়া, ২) ইন্দোনেশিয়া-ব্রাজিল, ৩) বাকি তিনটি চিলি ও চীনের মাঝের অঞ্চল। পৃথিবীর কেন্দ্রের অসমগোত্রীয় এই গঠন পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরের অংশের সীমানার গতিশীলতা সম্পর্কে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে আশা করা যায়। যা কিনা পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। বাটলার ও সুবই এর এই নতুন অনুসন্ধান পৃথিবীর গঠনের উপাদান, তাপীয় ইতিহাস, এবং বিবর্তন সম্পর্কেও নতুন জ্ঞানের জন্ম দেবে আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + 17 =