সাধারণ রক্ত পাতলা করার ওষুধই সাপের বিষের প্রতিষেধক ?

সাধারণ রক্ত পাতলা করার ওষুধই সাপের বিষের প্রতিষেধক ?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ জুলাই, ২০২৪
Default Alt Text

প্রতি বছর সারা বিশ্বে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় অগণিত মানুষের। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে ১৩৮,০০০ মানুষ মারা যায়। ৪ লক্ষ মানুষ শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে। সম্প্রতি বিষধর সাপের কামড় থেকে মানুষকে বাঁচাতে বিজ্ঞানীরা এক প্রতিষেধকের খোঁজ পেয়েছেন। ওষুধটি কম দামে সহজেই পাওয়া যায়। তারা জানিয়েছেন সাধারণ রক্ত পাতলা করার ওষুধেই নাকি চিকিৎসা হবে সাপের কামড়ের। তবে এই ওষুধ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা গবেষণার স্তরেই আছে। গবেষণাটি সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে।
ভারতবর্ষে গোখরো, কেউটে, কালাচ ও চন্দ্রবোড়ার কামড়েই বেশিরভাগ মৃত্যু হয়। এই প্রজাতির সাপেরা কামড়ের সঙ্গে সঙ্গেই বিষ ঢেলে দেয় শরীরে। কেউটে বা গোখরোর কামড় হলে যদি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষেধক না দেওয়া হয়, তা হলে রোগীকে বাঁচানোর আশা প্রায় ছেড়েই দিতে হয়। অনেক গোখরোয় এমন বিষ থাকে যা শরীরের কলার ক্ষতি করে। এই বিষের চিকিত্সা হয় অ্যান্টিভেনম দিয়ে। পরীক্ষাগারে গবেষকরা বিভিন্ন প্রাণীদের অল্প পরিমাণে বিষের সংস্পর্শে নিয়ে আসে। তারপর প্রতিক্রিয়ায় সেসব প্রাণীরা যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে তা সংগ্রহ করে তৈরি করা হয় অ্যান্টিভেনম। অ্যান্টিভেনম জীবন রক্ষা করে। তবে তারও বেশ কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। প্রত্যেকটি এক বা একাধিক প্রজাতির সাপের জন্য নির্দিষ্ট। এগুলোর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আবার এগুলো ব্যয়বহুলও। এই অ্যান্টিভেনম সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন কোল্ড স্টোরেজের। আবার হাসপাতালে ইনজেকশনের মাধ্যমেই অ্যান্টিভেনম দেওয়া যায়। তবে অ্যান্টিভেনম স্থানীয়ভাবে কলার ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে না। কারণ অ্যান্টিবডি পা বা হাতের কলায় পৌঁছতে পারে না। গবেষকরা তাই দেখার চেষ্টা করেছেন কীভাবে সস্তা, সহজলভ্য রক্ত পাতলা করার ওষুধ এই বিষের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর জন্য গবেষকরা আগে সাপের বিষের রাসায়নিক গঠন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। সাপের বিষ বিভিন্ন যৌগ দিয়ে গঠিত। সাধারণত, সাপের বিষ ত্বক বা পেশির কলা, হার্ট, স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। সচরাচর যে বিষগুলো কম মারাত্মক কিন্তু এখনও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করে যেমন কোবরার বিষ নিয়ে সেরকম কাজ হয়নি। গবেষণায় দেখা গেছে কেউটে বা গোখরো জাতীয় সাপের বিষের প্রতিষেধক হিসেবেই এই রক্ত পাতলা করার ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে অনেক আগে থেকেই হেপারিনয়েড ব্যবহার করা হয়। তারা দেখেছেন ক্রিস্পার জিন-এডিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই বিষ কীভাবে আমাদের কোশকে আক্রমণ করে। আর হেপারিনয়েড নামে এই সাধারণ ওষুধ, সাপের বিষ থেকে আমাদের শরীরের কলাকে রক্ষা করতে পারে। ওষুধটি সস্তাও। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুমোদন দিয়েছে যাতে মানুষ এগুলো নিজে ব্যবহার করতে পারে। এগুলো বাজারে সহজলভ্য। হেপারিনয়েড ঘরের তাপমাত্রায়ও স্থিতিশীল থাকে। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওষুধ সহজেই এবং দ্রুত পৌঁছে দেওয়া যায়। অন্যান্য গবেষণায়ও সাপের কামড়ের চিকিত্সার জন্য এই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের উপযোগিতা নিশ্চিত করেছে। এই ওষুধের সংমিশ্রণ সাপের বিষের চিকিত্সার জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে যা শুধুমাত্র ব্যয়বহুল অ্যান্টিভেনমের উপর নির্ভর করে না। গবেষকরা এ বিষয়ে বেশ আশাবাদী।