মহাকাশচারীদের খাবার বিস্বাদ লাগে

মহাকাশচারীদের খাবার বিস্বাদ লাগে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ জুলাই, ২০২৪
মহাকাশচারী

মহাকাশচারীরা জানান মহাশূন্যে খাবার অত্যন্ত বিস্বাদ লাগে তাই স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য যে খাবার খাওয়া দরকার তা খেতে বেশ অসুবিধা হয়। মহাকাশচারীদের জন্য পরিকল্পিত ডায়েট তারা গ্রহণ করতে না পারলে, দীর্ঘ মিশন তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ক্ষতিকারক হবে। নার্সিং হোমের বাসিন্দা বা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদেরও খেতে ইচ্ছা করেনা। আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা সাধারণ খাবারের সুগন্ধের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন, এই গবেষণায় খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য সুগন্ধকে ব্যক্তিগতস্তরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-তে প্রকাশিত এই গবেষণায় ডঃ জুলিয়া লো বলেছেন একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি খাওয়ার সময় একটা ভূমিকা পালন করতে পারে। বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা কীভাবে খাবারের গন্ধ এবং স্বাদ গ্রহণ করে তা এই গবেষণায় দেখা হয়েছে। ৫৪ জন প্রাপ্তবয়স্কের নমুনায় বিচ্ছিন্ন সেটিংসে ব্যক্তিদের সুগন্ধ এবং স্বাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্যকে ধরা পড়েছে এই গবেষণায়। গবেষণার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের মধ্যে একটা হল মহাকাশচারীদের জন্য আরও ভাল উপযোগী খাবার তৈরি করা, সেইসাথে বিচ্ছিন্ন পরিবেশে থাকা অন্যান্য লোকেদের পুষ্টির পরিমাণ ১০০% এর কাছাকাছি বৃদ্ধি করা।
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে খাবারের স্বাদে গন্ধ বড়ো ভূমিকা পালন করে। এই সমীক্ষায় গবেষকরা পরীক্ষা করেছেন যে কীভাবে ভ্যানিলা এবং বাদামের নির্যাস এবং লেবুর প্রয়োজনীয় তেলের অ্যারোমা পৃথিবীর স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) এর সীমাবদ্ধ সেটিংয়ে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রধান গবেষক ডাঃ লো বলেছেন, আইএসএস-সিমুলেটেড পরিবেশে ভ্যানিলা এবং বাদামের সুগন্ধ বেশি তীব্র ছিল, যেখানে লেবুর গন্ধ অপরিবর্তিত ছিল। গবেষকরা ভ্যানিলা এবং বাদামের সুগন্ধে একটি বিশেষ মিষ্টি রাসায়নিক খুঁজে পেয়েছেন, যাকে বলা হয় বেনজালডিহাইড, এটা বিশেষ গন্ধের প্রতি ব্যক্তির সংবেদনশীলতা ছাড়াও তার উপলব্ধি পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে পারে।
মহাশূন্যে ওজনহীনতার কারণে মহাকাশচারীদের তরল শরীরের নীচের অংশ থেকে উপরের অংশে স্থানান্তরিত হয়, যাতে মুখ ফুলে যায়, নাক বন্ধ হয়ে যায়, তাতে গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি প্রভাবিত হয়। এই লক্ষণগুলো সাধারণত স্পেস স্টেশনে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অদৃশ্য হতে শুরু করে। কিন্তু তরল স্থানান্তরের প্রভাব চলে যাওয়ার পরেও মহাকাশচারীরা তাদের খাবার উপভোগ করতে পারেন না, অর্থাৎ অন্য কোনো কারণ রয়েছে। খাবার খাওয়ার সময় তার স্বাদের পাশাপাশি গন্ধ, বর্ণ, তার টেক্সচার খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি করে। গবেষণা জানাচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দের অ্যারোমা খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বাড়ায় বা কমায়। তাই তারা ব্যক্তিভেদে স্বতন্ত্র খাবারের কথা বলছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − ten =