খননে বিপন্ন- আরও কয়েক হাজার প্রজাতি

খননে বিপন্ন- আরও কয়েক হাজার প্রজাতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ জুলাই, ২০২৪
খননে-বিপন্ন

উদ্বেগ আছে। থাকার কথা। কিন্তু নতুন করে অবাক হওয়া যাচ্ছে না। মানব সভ্যতার উন্নয়ন- অন্য প্রজাতিকে হুমকির মুখে ফেলা, নতুন করে অবাক করছেনা। শুধু হুমকির সম্মুখীন হওয়া প্রাণীদের সংখ্যা বাড়ছে এটুকু যা। এটুকু! বিশ্বজুড়ে খনিজ, তেল কিংবা গ্যাসের খননের কারণে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ৪৬৪২টি প্রজাতি আজ হুমকির সামনে দাঁড়িয়ে, যাকে বলে অস্তিত্ব সংকট। কারেন্ট বায়োলজি-তে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা তাই জানাচ্ছে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য অপরিহার্য লিথিয়াম এবং কোবাল্টের মতো খনিজের খনন সবচেয়ে বড়ো ঝুঁকি তৈরি করছে। এছাড়াও সৌর প্যানেল, বায়ু টারবাইন, চুনাপাথর খনন, (যা নির্মাণ সামগ্রী হিসাবে সিমেন্টের জন্য বিপুল পরিমাণে প্রয়োজন), অনেক প্রজাতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। খুব আশ্চর্যজনকভাবে খনিগুলো যেখানে অবস্থিত সেই অঞ্চলগুলোতে জীববৈচিত্র্য অনেক বেশি। তবে শুধুমাত্র খনির অবস্থান হুমকির একমাত্র কারণ নয়। খনিতে পৌঁছানর জন্য তৈরি রাস্তা অথবা পরিকাঠামো, খনি থেকে বেরোনো দূষিত জলের স্রোত, বহু দূরে থাকা প্রাণীগুলিকেও প্রভাবিত করে।

মেরুদণ্ডী সব প্রাণীদের মধ্যে খননের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে মাছের। প্রায় ২০৫৩ প্রজাতির মাছ আজ ঝুঁকির মুখে – এদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এরপরে রয়েছে সরীসৃপ, উভচর, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীরা। গবেষকরা মনে করেন ক্ষতি কতটা হচ্ছে, তা নির্ভর করে নির্দিষ্ট প্রজাতির বসবাসের এলাকা এবং তার জীবনধারার উপর। উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে মিষ্টি জলের প্রাণীদের কথা। জলাধারাগুলো বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হতে পারে। খননের ফলে যে জল দূষণ হয়, তা কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত নদী এবং সমভূমিকেও প্রভাবিত করতে পারে। আবার বাড়ি তৈরির জন্য ব্যবহৃত বালি খনন, নদী এবং জলাভূমিতে জলের প্রবাহকে পরিবর্তন করে। এতে বিপদে পড়ে প্রাণীগুলি। গাঙচষা পাখি- শিকারীদের কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে একই কারণে। খনিজ উত্তোলন গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল জুড়ে মেরুদন্ডী প্রজাতির সংখ্যাকে ক্ষতির মুখে ফেলছে। আন্দিজ, উপকূলীয় পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার খনিজ অঞ্চলে প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ঘানায় পাললিক সোনার খনন পরিবেশে পারদ দূষণের প্রধান কারণ। এই পারদ দূষণই ঐ জায়গার পাখিদের হুমকির মুখে ফেলছে।

খনন চলছে, খনন চলবে। বিরাট মানবগোষ্ঠী প্রাকৃতিক পরিবেশের নানা উপাদানের ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল। অপর দিকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন আছে। কিন্তু আইনের সুফল, তার সঠিক প্রয়োগে। তবে সভ্যতার মেকি উন্নয়নের উৎসবে আমরা যেভাবে মেতে উঠেছি, তার বলি হচ্ছে শতশত নিরীহ বন্যপ্রাণী- সেটা জেনে, না জানার ভান করতে হবে আর কতদিন !