অলিম্পিক পদক জিততে সাহায্য লাগে মস্তিষ্কেরও

অলিম্পিক পদক জিততে সাহায্য লাগে মস্তিষ্কেরও

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ আগষ্ট, ২০২৪
অলিম্পিক পদক

অলিম্পিক স্বর্ণ পদকের অধিকারীরা, অবশ্যই নিজেদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সেরা নন সেই ক্ষেত্রের উচ্চ মান পূরণের জন্যও আদর্শ। প্রতি অ্যাথলিট নিজেদের গতি, নির্ভুলতা, শক্তি, সহনশীলতার শারীরিক সীমা ধাক্কা দিয়ে বাড়িয়ে তোলেন। একজন দুর্ধর্ষ প্যারফর্মারের মস্তিষ্ক আমাদের থেকে কিসে আলাদা? বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদদের সর্বোচ্চ ফিটনেস এবং মারাত্মক শক্তি থাকে, তেমনি স্নায়ুতন্ত্রের অসংখ্য বৈশিষ্ট্য অলিম্পিয়ানদের সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা করে রাখে। যে মুহূর্ত থেকে শরীর তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবর্তন অনুভব করে, উচ্চ প্রশিক্ষিত ক্রীড়াবিদরা প্রস্তুত হতে থাকেন। মাঠে নানা ধরনের শব্দ – দর্শক আসন থেকে উঠে আসা সম্মিলিত কোলাহল, দূরগামী জেট প্লেনের গর্জন, ঘোষণাকারীর স্পিকারের কর্কশ শব্দ – ক্রীড়াবিদের মাথা সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে নেয় কোনটা তার সফলতার জন্য জরুরি আর কোনটা তাকে বিভ্রান্ত করবে।
২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন শীর্ষ-বিভাগের স্পোর্টিং দলের ছাত্র-অ্যাথলেটদের বয়স এবং লিঙ্গের তুলনায় শব্দের প্রতি বৃহত্তর প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ব্রেন-ওয়েভ রিডিং-এর ভিত্তিতে বলা হয়েছে অ্যাথলিটরা বহিরাগত আওয়াজে বিভ্রান্ত হয়না, বরং বিক্ষিপ্ত না হয়ে লক্ষ্যযুক্ত শব্দগুলোতে ফোকাস নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং ফোকাসের কারণে মস্তিষ্কে বিক্ষিপ্ততা স্ক্রীন করার ক্ষমতা গড়ে ওঠে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত অন্য গবেষণায় দেখা গেছে দক্ষ টেনিস খেলোয়াড়রা তীব্রভাবে দৃষ্টি ফোকাস করে থাকে যা ‘কোয়াইট-আই’ বা ‘স্থির- দৃষ্টি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন দক্ষ খেলোয়াড়দের ‘স্থির- দৃষ্টি’র সময়কাল বেশি থাকে, আর খেলোয়াড় সেই বিস্তৃত ফোকাসের জন্য বেশি ভালো শট নেয়। অন্যান্য খেলার ক্ষেত্রেও শোনার পাশাপাশি ‘স্থির- দৃষ্টি’র ফোকাস খেলোয়াড়কে দারুণ পারফর্ম করতে সাহায্য করে।
মোটর ক্রিয়াগুলো মূলত মস্তিষ্কের বাইরের স্তর বা কর্টেক্স দ্বারা সমন্বিত হয়। স্থানিক সচেতনতা ও শরীরের গতির উপলব্ধির সাথে সম্পর্কিত মস্তিষ্কের অঞ্চলের পুরুত্ব উচ্চস্তরের ক্রীড়াবিদদের বেশি থাকে। ছোটো নমুনায় দেখা গেছে কর্টিকাল অঞ্চল ও স্ট্রিয়াটাম নামে পরিচিত ফোরব্রেন নিউরনের ক্লাস্টারের একটা মধ্যবর্তী পথ নড়াচড়ার ক্রম স্থির করে, এই অংশ উচ্চ-স্তরের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে উন্নত।
অনেক মানুষ জন্মান যাদের শ্রবণ ফোকাস করার ক্ষমতা, মনোযোগ স্থির করে দৃষ্টিপাত, চটজলদি প্রতিক্রিয়া, শক্তিশালী পেশি থাকে। তবু যারা অলিম্পিক পদক জেতেন তাদের আস্তিনের লুকোনো তাস হল তাদের শরীরে ডোপামাইন অ্যাক্টিভ ট্রান্সপোর্টার নামে জিনের উপস্থিতি। এই জিন শক্তি খরচ, নড়াচড়ার সাথে যুক্ত ও পুরস্কার লোভী। যারা অলিম্পিক সোনা জেতার লক্ষ্যে নিজেদের উজাড় করে দেন তারা নিজের মস্তিষ্ককে পারফর্ম করার জন্য ইঞ্জিনের মতো চালান যা তাদের শরীরের বাকি অংশকে ঠেলা দিয়ে সীমা অতিক্রম করায়।