দাবানলের ধোঁয়া থেকে রেহাই পেতে গাছেরাও তাদের ‘নিঃশ্বাস ধরে রাখে’

দাবানলের ধোঁয়া থেকে রেহাই পেতে গাছেরাও তাদের ‘নিঃশ্বাস ধরে রাখে’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ আগষ্ট, ২০২৪
দাবানল

গ্রীষ্মের শুরু থেকেই সূর্যের প্রখর তেজ। প্রবল গরমে পুড়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। পরিসংখ্যান বলছে, বহুকাল ধরে এত উষ্ণ বছর দেখেননি মানুষ। বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তাপপ্রবাহের হুঁশিয়ারি থাকে আবহবিদদের। সেই সঙ্গে থাকে দাবানলের আশঙ্কাও। যখন এলাকায় দাবানলের ধোঁয়া বাতাসে মিশে যায় ডাক্তাররা আমাদের পরামর্শ দেন বাড়িতে থাকার। বাতাসের ক্ষতিকারক কণা এবং গ্যাসে শ্বাস নেওয়া এড়াতে মানুষকে বাড়ির ভিতরে থাকতে বলেন তারা। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন ছোটো বড়ো গাছ সেই ধোঁয়ার হাত থেকে কীভাবে পালাবে? কী হবে তাদের?
এক নতুন গবেষণা থেকে জানা যায় গাছেরাও আমাদের মতো সাড়া দিতে পারে। আমরা যেমন ধোঁয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে জানলা দরজা বন্ধ করে দিই, কিছু গাছও তেমনই করে। তারা তাদের জানালা দরজা বন্ধ করে তাদের শ্বাস ধরে রাখে।
গাছের পাতার উপরিভাগে ছোটো ছোটো ছিদ্র থাকে। এদের বলা হয় স্টোমাটা। আমরা যেমন অক্সিজেন নিই এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করি গাছেরা ঠিক তার উল্টো করে- বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নেয় এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। এছাড়াও বাতাসে মিশে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। গাছেদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। দাবানলের ধোঁয়া বহু দূর ছড়িয়ে পড়ে আর সূর্যের আলোতে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়। সূর্যালোকের সাহায্যে উদ্বায়ী জৈব যৌগ ও নাইট্রোজেন অক্সাইড ভূমি-স্তরের ওজোন তৈরি করে, যা মানুষের শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে ওঠে। এটি গাছের পাতার পৃষ্ঠের ক্ষতি করে। এছাড়াও উদ্ভিদের কলাকে অক্সিডাইজ করে সালোকসংশ্লেষণকে ধীর করে গাছের ক্ষতি করতে পারে। বিজ্ঞানীদের ধারণা শহরাঞ্চলগুলো ওজোনের উত্স হিসাবে পরিচিত হলেও সম্প্রতি দাবানলের ধোঁয়া একটি উদ্বেগের কারণ। গবেষকরা প্রচন্ড ধোঁয়ার মধ্যেই পন্ডেরোসা পাইনের পাতা-স্তরের সালোকসংশ্লেষণ পরিমাপ করছিলেন। অপ্রত্যাশিতভাবে তারা দেখেন যে গাছের ছিদ্র বা স্টোমাটা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রায় শূন্য ছিল। গাছের পাতা থেকে স্বাভাবিক উদ্বায়ী জৈব যৌগ খুব কম পরিমাণে নির্গত হচ্ছিল। সোজা কথায় পাতাগুলো “শ্বাস নিচ্ছিল না”। পাতার তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা পরিবর্তন করে, গবেষকরা দেখেন পাতার “বায়ুপথ” আবার পরিষ্কার হয় এবং সালোকসংশ্লেষণ উন্নত হয়। গাছের পাতা থেকে উদ্বায়ী জৈব যৌগও নির্গত হতে শুরু করে। দাবানলের প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে কিছু গাছ বাইরের বাতাসের সাথে তাদের বিনিময় পথ বন্ধ করে দেয়। ধোঁয়ার সংস্পর্শে এলে তারা কার্যকরভাবে তাদের শ্বাস ধরে রাখে। হতে পারে ধোঁয়ার কণা পাতাগুলোর ওপর একটা আবরণ তৈরি করে যার ফলে পাতার ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। অথবা পাতার ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে বায়ুপথ আঠালো করে দেয়, আটকে দেয়। আবার এও হতে পারে পাতাগুলো ধোঁয়া শনাক্ত করে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ নিজেদের ছিদ্র বন্ধ করে দেয় যাতে ক্ষতি না হয়।