সমুদ্রের তলদেশে ‘ডার্ক অক্সিজেন’- বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

সমুদ্রের তলদেশে ‘ডার্ক অক্সিজেন’- বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ আগষ্ট, ২০২৪
সমুদ্রের-তলদেশে

বাতাসে মিশে থাকা আমাদের সবচেয়ে চেনা গ্যাসের নাম অক্সিজেন। মানুষ-সহ পৃথিবীর সকল প্রাণী শ্বাস নেওয়ার সময় অক্সিজেন গ্রহণ করে। শ্বাসক্রিয়ায় অক্সিজেনের ভূমিকা এই গ্যাসকে প্রাণীজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত করেছে। এই অক্সিজেন তৈরি করে গাছ। গাছ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটি থেকে জল আর বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিয়ে সূর্যের আলোর সাহায্যে তাদের অক্সিজেন আর শর্করায় পরিণত করে। অক্সিজেন মেশে পরিবেশে আর শর্করা জমা হয় গাছের ভিতর এবং মাটির মধ্যে। আমরা সবাই জানি অক্সিজেন তৈরিতে সূর্যালোকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সম্প্রতি এক নতুন গবেষণা থেকে জানা যায় যে সমুদ্রের তলদেশে অন্ধকার গভীরতায় নিঃশ্চুপে ঘটে যাওয়া এক রাসায়নিক বিক্রিয়া অবাধে অক্সিজেন তৈরি করে চলেছে। এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারটি আমাদের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। আমরা জানি অক্সিজেন তৈরি করতে সালোকসংশ্লেষণকারী জীবের প্রয়োজন। স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মেরিন সায়েন্সের গবেষকরা গভীর সমুদ্রে খননের কাজ চালানোর প্রভাব মূল্যায়ন করতে গিয়ে সমুদ্রতলের অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করার সময় এক আশ্চর্য ঘটনা আবিষ্কার করেন। দলের গবেষণা অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘ডার্ক অক্সিজেন’। কারণ সমুদ্রের এই অংশটি এতটাই গভীর যে সূর্যের আলো সেখানে পৌঁছানো অসম্ভব। সালোকসংশ্লেষণ ছাড়াই সেখানে অক্সিজেন তৈরি হওয়া বিজ্ঞানীদের কাছেও বিস্ময়কর। গবেষণাটি নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে সমুদ্রের পৃষ্ঠের প্রায় ৪০০০ মিটার নীচে সম্পূর্ণ অন্ধকারে অক্সিজেন তৈরি হচ্ছে। প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে কালো রঙের গোলাকার পাথরের একটি স্তর রয়েছে। রহস্যের জট সমাধানের জন্য, গবেষকরা কিছু নডিউল শিলা সংগ্রহ করেছিলেন। তারা পরীক্ষাগারে দেখার চেষ্টা করেন এই শিলাগুলো ‘ডার্ক অক্সিজেন’ উত্পাদনের উত্স কিনা। তারা দেখেন সমুদ্রের তলদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে কিছু দুষ্প্রাপ্য ধাতু- কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ এবং নিকেল, সবই একটি পলিমেটালিক মিশ্রণে জমে আছে। এক একটি পলিমেটালিক নডিউল ০.৯৫ ভোল্ট পর্যন্ত ভোল্টেজ উত্পাদন করতে পারে। একত্রিত অবস্থায় এগুলো একটা ব্যাটারির সিরিজের মতো কাজ করে। তৈরি করতে পারে প্রয়োজনীয় ১.৫ ভোল্ট যা সহজেই তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জল ভেঙে অক্সিজেন তৈরি করে। পৃথিবীর অর্ধেক অক্সিজেন আসে সমুদ্র থেকে। অ্যান্ড্রু সুইটম্যান বলেছেন যে পৃথিবীতে জীবনের উৎসের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন ছিল। এখনও পর্যন্ত আমাদের ধারণা পৃথিবীতে অক্সিজেনের সরবরাহ শুরু হয়েছিল সালোকসংশ্লেষকারী জীব থেকে। গবেষণার এই ফলাফল আমাদের বলছে জীবনের শুরু কোথা থেকে তা পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − seven =