মাংস-খেকো ব্যাকটেরিয়া, ড্রাগ প্রতিরোধী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার

মাংস-খেকো ব্যাকটেরিয়া, ড্রাগ প্রতিরোধী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ আগষ্ট, ২০২৪
মাংস-খেকো ব্যাকটেরিয়া

গুরুতর ভাবে নরম টিস্যু সংক্রমণের জন্য দায়ী হল স্ট্রেপ্টোকক্কাস পাইজেনেস ব্যাকটেরিয়া, যাকে কখনও কখনও “মাংস-খাদক ব্যাকটেরিয়া” বা স্ট্রেপ বলা হয়। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত একটা ছোটো কাটা অংশের মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে, নরম টিস্যু সংক্রমণ ঘটিয়ে ‘ফ্লেশ-ইটিং” রোগ সৃষ্টি করে। এতে দ্রুত কলার মারাত্মক ক্ষতি হয়। এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য অঙ্গবিচ্ছেদের প্রয়োজন হয়। সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা এমন এক যৌগ তৈরি করেছেন যা ইঁদুরের মারাত্মক “ফ্লেশ -ইটিং’’ রোগ সহ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমায়। গবেষকদের বক্তব্য এই যৌগ সম্পূর্ণ নতুন শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিক হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এমন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে চিকিত্সকদের হাতিয়ার হতে পারে এই যৌগটি। বর্তমান গবেষণা সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ প্রকাশিত হয়। ল্যাবে দেখা গেছে এই যৌগ ড্রাগ-প্রতিরোধী গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া, যার থেকে বিষাক্ত শক সিন্ড্রোম এবং অন্যান্য মারাত্মক অসুস্থতা সৃষ্টি হতে পারে তার ক্ষেত্রে কাজ করবে।
এই যৌগে পিরিডন থাকে, যার নামকরণ করা হয়েছে জিএমপিসাইডস, অর্থাৎ গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া ঘাতক। এটা নরম যোজক কলা যেমন রক্ত, পেশি, স্নায়ু্র সংক্রমণে আক্রান্ত কলাতে পরীক্ষা করা হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত, নেক্রোটাইজিং ফ্যাসাইটিস বা “ফ্লেশ ইটিং” রোগ। “ফ্লেশ ইটিং” রোগে আক্রান্ত প্রায় ২০% রোগী মারা যায়। জিএমপিসাইডস যৌগ ব্যাকটেরিয়ার ভিরুলেন্স কমায় আর ত্বকের ক্ষতিগ্রস্থ স্থানগুলোর সংক্রমণ নিরাময় ত্বরান্বিত করে।
জিএমপিসাইডস কীভাবে এই কাজ করে তা স্পষ্ট না হলেও, মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে ব্যাকটেরিয়ার কোশের ঝিল্লির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। ব্যাকটেরিয়ার ঝিল্লির কাজগুলির মধ্যে একটা কাজ হল বাইরে থেকে উপাদান ঢুকতে না দেওয়া। কিন্তু জিএমপিসাইডস দিয়ে চিকিত্সার পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে, ঝিল্লিগুলি প্রবেশযোগ্য হতে শুরু করে আর এমন জিনিস ব্যাকটেরিয়াতে প্রবেশ করে যা ব্যাকটেরিয়ার ঝিল্লি ঢুকতে দিতে চায়না। এর থেকে বোঝা যায় ব্যাকটেরিয়ার ঝিল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই যৌগ ব্যাকটেরিয়ার নিজস্ব কাজ ব্যাহত করে, এমনকি ব্যাকটেরিয়ার হোস্টের ক্ষতি করার ক্ষমতা কমে যায় আর ব্যাকটেরিয়াগুলো হোস্টর প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে লড়াই করতে অকৃতকার্য হয়। ব্যাকটেরিয়ারোধ করা ছাড়াও, জিএমপিসাইডস ড্রাগ প্রতিরোধী স্ট্রেনের ক্ষেত্রেও ভালো কাজ করে। জিএমপিসাইডস ওষুধ হিসেবে আনার জন্য অন্য কোম্পানির সাথে মিলে একে ওষুধে রূপান্তরিত করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হবে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 + nine =