সারকোপেনিক ওবেসিটি- লাগাম থাকুক নিজের হাতে

সারকোপেনিক ওবেসিটি- লাগাম থাকুক নিজের হাতে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ আগষ্ট, ২০২৪
ওবেসিটি

বার্ধক্য অনিবার্য। কালের নিয়মে তা আসবেই। কিন্তু প্রাত্যাহিক জীবনযাপনের উপর নির্ভর করে, বার্ধক্য ঠিক কত তাড়াতাড়ি হানা দেবে শরীরে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের পেশির শক্তি কমে যায়। দুবর্ল হয়ে যায় আমাদের পেশির ভর। এরই নাম সারকোপেনিয়া। বিজ্ঞানীরা মনে করেন শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এই রোগের কারণ। এর ফলে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, ফলে হাঁটাচলা বা শৌচালয় ব্যবহারে অসুবিধা দেখা দেয়। স্বাধীনতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। সকলের ধারণা যে সারকোপেনিয়া শুধুমাত্র বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিশেষ করে যারা রোগা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন সারকোপেনিয়া স্থূল এবং মধ্য বয়সীদের মধ্যেও দেখা যায়। সারকোপেনিক ওবেসিটি একধরনের স্থূলতা যেখানে একজন ব্যক্তির ওজন বেশি, শরীরে মেদের পরিমাণও বেশি কিন্তু তার পেশির ভর এবং শক্তি কমে গেছে। চিকিৎসকদের অভিমত ব্যায়াম এবং যথাযথ পুষ্টির অভাবে এই অবস্থাটি মানুষের শরীরে দেখা যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথমদিকে বুঝতে পারেনা যে তাদের শরীরে সমস্যা লুকিয়ে আছে। অথবা তাদের অতিরিক্ত ওজন না থাকলেও চর্বির আধিক্য রয়েছে। অন্যদিকে শরীরে পেশির ভর ও শক্তি হারিয়ে গেছে। যদিও স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশি সচেতন। কিন্তু স্থূলতা এবং পেশির ভর ও শক্তি কমে যাওয়া এই দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাব আরও বেশি ক্ষতিকারক। এর কারণ পেশি আমাদের দেহের নড়াচড়া এবং বিপাক উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সারকোপেনিক স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিনের কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। ফলে অসুস্থতা বৃদ্ধি পায় এবং তাড়াতাড়ি মৃত্যু ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে যে চল্লিশের কোটায় পৌঁছলেই আমাদের ১% পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার যে পেশি ভর রয়েছে তাও কম কার্যকরী হয়ে যায়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে তিরিশ থেকে সত্তরের কোটায় বয়স হলে পুরুষদের ক্ষেত্রে পেটের চর্বি ২০০% এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪০০% বৃদ্ধি পেতে পারে। সারকোপেনিক স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করতে চিকিৎসকেরা সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে ব্যায়ম করা, হাঁটা বা সাইকেল চালানো, অথবা সাঁতার কাটা যেতে পারে। এর সঙ্গে প্রয়োজন খাদ্যতালিকায় বেশ কিছু পরিবর্তন কারণ পুষ্টি এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাবারের মধ্যে কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, মাংস, ডাল, সয়া মিল্ক প্রভৃতি খাওয়া যেতে পারে। তবে মধ্য বয়সে এসে শারীরিক কার্যকলাপ এবং খাদ্যাভ্যাসে এই ধরনের পরিবর্তন করা সহজ নয়। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে সারকোপেনিক ওবেসিটি যত বেশি হবে, ব্যায়াম করা তত কঠিন হবে। এতে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না। ঠিক একটা ক্ষতিকারক চক্রের মতো, তাই সময় থাকতে সাবধান।