পৃথিবীর পরিবেশগত সমস্যার চাপে উপকূলীয় উদ্ভিদ গভীর সমস্যার সম্মুখীন। সমুদ্রের জল বৃদ্ধিতে বন্যা ও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের সম্মিলিত প্রভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রজননে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এনভায়রনমেন্টাল পলিউশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা দেখায় এই দুই কারণ পরীক্ষিত উদ্ভিদ প্রজাতির ওপর প্রভাব ফেলেছে। ইউনিভার্সিটি অফ প্লাইমাউথ স্কুল অফ বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড মেরিন সায়েন্সেস এবং ইন্টারন্যাশনাল মেরিন লিটার রিসার্চ ইউনিটের প্লাস্টিক দূষণ ও উদ্ভিদ জীববিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। বাক’স হর্ন প্ল্যান্টেন (প্ল্যান্টাগো কোরোনোপাস)-এর আবাসস্থল সাধারণত সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের বালির টিলায়। ইউরোপ, এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডেও এই উদ্ভিদ দেখা যায়। ৩৫ দিন ধরে প্রচলিত বা জৈব-অবচনযোগ্য প্লাস্টিকযুক্ত মাটিতে এই উদ্ভিদ বৃদ্ধি করে ৭২ ঘন্টা সমুদ্রের জলে প্লাবিত করা হয়েছিল। উপকূলীয় ঝড়ের সময় সমুদ্রের ঢেউয়ে এধরনের বন্যায় উদ্ভিদ উন্মুক্ত হয়। তারপর বিজ্ঞানীরা গাছের আকার, সালোকসংশ্লেষের কার্যকারিতা এবং ফুলের উৎপাদন আরও ২৪ দিন ধরে এই উদ্ভিদগুলোতে পর্যবেক্ষণ করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্লাস্টিক ব্যবহার উদ্ভিদের সম্পদের চাহিদার ওপর স্পষ্ট প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে গাছপালার বৃদ্ধি পরিবর্তিত হয়। গাছের সালোকসংশ্লেষণ দক্ষতা স্বল্পসময়ের জন্য চাপা থাকে। এতে উদ্ভিদের জল, পুষ্টি এবং সূর্যালোক ধরার ক্ষমতা প্রভাবিত হয়। এই ক্ষমতার সঙ্গে বাস্তুতন্ত্রের সুস্থতার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। গবেষকদের বক্তব্য সমুদ্রের জলের বন্যার সাথে মাইক্রোপ্লাস্টিক যুক্ত হলে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয় যার ফলে গাছের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। এতে বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতার ওপর একাধিক চাপ সৃষ্টি হয়।
গবেষণার প্রধান লেখক সহযোগী অধ্যাপক ডঃ মিক হ্যানলে বলেন, সাধারণত উপকূলীয় উদ্ভিদ, তৃণভূমি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে জনসাধারণকে রক্ষা করে। এই ধরনের উদ্ভিদ জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কিন্তু এরা এখন নানভাবে বিপন্ন, যার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন একটা কারণ। এই ধরনের ঝুঁকিগুলোর প্রভাব একত্রে দেখতে গেলে অনেক গভীর। গবেষণার ফলাফল বলছে আগামী দশকগুলোতে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ ও উপকূলীয় বন্যার জন্য পরিবেশে সংকট সৃষ্টি হবে। এর জন্য তাই বিশ্ব জুড়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।