প্রাচীন স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বেশিদিন বাঁচত

প্রাচীন স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বেশিদিন বাঁচত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ আগষ্ট, ২০২৪

গবেষণা জানাচ্ছে জুরাসিক যুগে প্রারম্ভিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বৃদ্ধি ও বিকাশের ধরন বর্তমান স্তন্যপায়ী প্রাণীদের থেকে আলাদা। লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ বনের জীবাশ্মবিদরা দাঁতের জীবাশ্মের গোড়ার বৃদ্ধির রিং অধ্যয়ন করে বয়স দেখেছেন। এর থেকে প্রাচীন প্রাণীদের জীবনকাল, তাদের বৃদ্ধির হার, নারী পুরুষ হিসেবে কখন তারা পূর্ণতায় পৌঁছেছিল তাও তারা পরিমাপ করতে পেরেছেন। এই গবেষণা সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা তিনটে আলাদা আলাদা স্থানে প্রারম্ভিক জুরাসিক যুগ থেকে শুরু করে জুরাসিক যুগের শেষ পর্যায়ের (২০ -১৫ কোটি বছর) স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দাঁতের জীবাশ্ম নিয়েছেন। তারপর এই জীবাশ্মের গোড়ায় থাকা বৃদ্ধি রিং অধ্যয়ন করেছেন। ওয়েলসে পাওয়া জীবাশ্ম প্রারম্ভিক জুরাসিক যুগের প্রাচীনতম পরিচিত স্তন্যপায়ীর পূর্বসূরীর। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডশায়ারে পাওয়া জীবাশ্মগুলো বিস্তৃত পরিসরে পাওয়া প্রাথমিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের। তৃতীয় স্থান পর্তুগালে পাওয়া জীবাশ্মগুলো জুরাসিক যুগের শেষদিক থেকে পাওয়া। সিঙ্ক্রোট্রন এক্স-রে টোমোগ্রাফির মাধ্যমে এই জীবাশ্মগুলো অধ্যয়ন করা হয়েছিল।

জীবাশ্মের দাঁতের গোড়া বা রুট সিমেন্টে (হাড়ের যে কলা দাঁতকে চোয়ালের সাথে সংযুক্ত করে), গবেষকরা বৃদ্ধির ক্ষুদ্র রিংগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এই ধরনের বৃদ্ধির রিং গাছের গুঁড়িতে খালি চোখে দেখা যায়। তবে দাঁতের গোড়ার রিংগুলো মাইক্রোস্কোপিক স্তরে দৃশ্যমান। রিংগুলো গণনা করে, তাদের পুরুত্ব এবং গঠন বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই বিলুপ্ত প্রাণীদের বৃদ্ধির ধরণ ও জীবনকাল পুনর্গঠন করতে পেরেছেন। প্রারম্ভিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বৃদ্ধি খুব ধীর ছিল, কিন্তু তারা তাদের বর্তমান উত্তরসূরীদের তুলনায় বেশিদিন বাঁচত। যেমন ইঁদুর এখন মাস দুয়েক বাঁচে কিন্তু জুরাসিক যুগের প্রাণী ৮ থেকে ১৪ বছর বাঁচত। জুরাসিক যুগের পূর্বসূরীদের পূর্ণাঙ্গ নারী বা পুরুষ হতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগত, বর্তমানে ওই ধরনের প্রাণীর উত্তরসূরীরা মাত্র কয়েক মাসে পূর্ণাঙ্গ অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। গবেষকদের অনুমান স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্বতন্ত্র জীবনচক্র, উচ্চ বিপাকীয় হার এবং পিতামাতার যত্নের বর্ধিত পর্যায় লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিকশিত হয়েছে। জুরাসিক যুগের সময়কাল এই পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 9 =