কী আছে সমুদ্র পৃষ্ঠের ১৩০০০ ফুট নীচে!

কী আছে সমুদ্র পৃষ্ঠের ১৩০০০ ফুট নীচে!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ আগষ্ট, ২০২৪
সমুদ্র পৃষ্ঠের ১৩০০০ ফুট নীচে

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে উষ্ণায়ন বিগত ৫০ বছরে মহাসাগরগুলোর উপরিতল ও গভীরের তাপমাত্রা ও পরিবেশ দ্রুত হারে বদলে দিচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের বাড়তি তাপ আর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে শুষে নেওয়ার স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে মহাসাগরের। সেই ভাবেই এত দিন মহাসাগরগুলো তাদের গভীরে থাকা প্রাণী ও উদ্ভিদদের বাঁচিয়ে এসেছে, বাঁচিয়ে রেখেছে। বর্তমানে জানা গেছে সমুদ্রের অতল জলরাশির গভীরে, প্রায় ১৩,১০০ ফুট নীচে, উচ্চ চাপ এবং নিম্ন তাপমাত্রার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে যা ক্যালসিয়াম কার্বনেট দ্রবীভূত করে। আর এই ক্যালসিয়াম কার্বনেটই সামুদ্রিক প্রাণীদের খোলসের প্রধান উপাদান। বৈজ্ঞানিকরা এই অঞ্চলটিকে কার্বনেট কমপেনসেশন ডেপথ জোন নাম দিয়েছেন। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে উচ্চ চাপ এবং নিম্ন তাপমাত্রা এক অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যা এতটাই অম্লীয় যে সেখানে জলজ প্রাণীদের শেল বা খোলস এবং কঙ্কাল দ্রবীভূত হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা এই অঞ্চলটি প্রসারিত হচ্ছে এবং শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্ব মহাসাগরের অর্ধেক অংশ এই জোনে পরিবর্তিত হতে পারে।
অন্যদিকে বলা হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর কারণে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। এই গ্যাস সমুদ্রপৃষ্ঠের জল শোষণ করছে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের জল অম্লয়ী হয়ে পড়ছে। আর এই দুটি বিষয়ই সংযুক্ত। সাগরে জলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ক্রমবর্ধমান ঘনত্বের কারণে, এর pH কমে যাচ্ছে, জল আরও অম্লীয় হয়ে উঠছে। এবং সমুদ্রের গভীরে অবস্থিত অঞ্চলটি যেখানে ক্যালসিয়াম কার্বনেট দ্রবীভূত হচ্ছে, সেই অঞ্চল সমুদ্রতল থেকে উপরে প্রসারিত হচ্ছে। সমুদ্রের যে অঞ্চলের মধ্যে ক্যালসিয়াম কার্বনেট রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল নয় এবং দ্রবীভূত হতে শুরু করে সেই অঞ্চলটিকে লাইসোক্লাইন বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই অঞ্চলটি প্রাক-শিল্প যুগ থেকে আজ অবধি প্রায় ১০০ মিটার বেড়েছে এবং সম্ভবত এই শতাব্দীতে কয়েকশ মিটার বৃদ্ধি পাবে। গবেষকরা সতর্ক করছেন সমুদ্রতলে লক্ষ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার সম্ভবত দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে যার ফলে চুনযুক্ত পলল রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীলতা হারিয়ে দ্রবীভূত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে আর অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। তার ফলে জলজ প্রাণীদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। সামুদ্রিক প্রজাতিদের জন্য বাসযোগ্য স্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + seventeen =