অতিরিক্ত ভেষজ বস্তুর ব্যবহারে লিভারের ক্ষতি হতে পারে – গবেষণা জানাচ্ছে

অতিরিক্ত ভেষজ বস্তুর ব্যবহারে লিভারের ক্ষতি হতে পারে – গবেষণা জানাচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ আগষ্ট, ২০২৪
লিভারের ক্ষতি

গ্রিন টি, হলুদ এধরনের উদ্ভিজ্জ বস্তু পরিমাপ মতো গ্রহণ করলে তা শারীরিকভাবে উপকারী হতে পারে। কিন্তু ভেষজ বস্তু বেশি মাত্রায় বা পরিপূরক হিসেবে গ্রহণ করা শরীরের পক্ষে মোটেও ভালো নয়, বরং তা আমাদের লিভারের সমস্যা ঘটায় বলে গবেষণা জানাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান, আমেরিকার ১৮৬ লাখ মানুষের ওপর গবেষণা করে জানাচ্ছে এই জনসংখ্যার প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো ভেষজ জিনিস গ্রহণ করেন। আর এই প্রত্যেকটা ভেষজ বস্তুর লিভার নষ্ট করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত যদি ক্যাপসুলের আকারে এগুলো গ্রহণ করা হয় তাহলে শরীরে এই ভেষজগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় প্রবেশ করবে। তারা জানিয়েছেন বিশ্বজুড়ে ধীরে ধীরে ভেষজ বস্তু গ্রহণে লিভারের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গবেষণা জামা নেটওয়ার্ক ওপেন-এ প্রকাশিত হয়েছে।
ভেষজ ওষুধ বাজারজাত পণ্যে পরিণত হওয়ার আগে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে এর হিউম্যান ফার্মাকোকাইনেটিক বা ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়না। ফার্মাকোকিনেটিক্সে শরীরে একটা ওষুধ গেলে তা শরীরের ভেতরে যাওয়ার পথ, শরীরের ভেতরে কোথায় যাচ্ছে ও কীভাবে তা শরীরের বাইরে যাচ্ছে তা জানা যায়। শরীরে এই ওষুধের শোষণ, জৈবভাবে প্রাপ্তি, তার বিতরণ, বিপাক এবং নির্গমন বোঝা যায়। গবেষণাপত্রে সতর্ক করা হয়েছে নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার অভাবে ভেষজ এবং খাদ্যতালিকাগত পরিপূরকগুলোর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। ইউএস ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভে (এনএইচএএনইএস) তে নথিভুক্ত ৯৬৮৫ জন মানুষের তথ্য থেকে, গবেষকরা দেখেছেন যে ছটি সর্বাধিক ব্যবহৃত ভেষজ পণ্য সাধারণত উচ্চ কোলেস্টেরল, বিষণ্নতা এবং ব্যথার চিকিত্সায় ব্যবহৃত হয়। আর এর সাথে জড়িত লিভারের ক্ষতির হার ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০ শতাংশে পৌঁছেছে।
বয়স্ক ব্যক্তিরা আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার জন্য ভেষজ সম্পূরক ব্যবহার করে থাকেন। হলুদে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে এই ধারণার বশবর্তী হয়ে বয়স্ক মানুষরা অস্থিসন্ধির স্বাস্থ্য বা আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে হলুদ খান। কিন্তু একাধিক র‍্যান্ডমাইজড ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অস্টিওআর্থারাইটিসে হলুদের কার্যকারিতা দেখা যায়নি। অন্যান্য সম্পূরকের ক্ষেত্রেও বিশেষ কার্যকারিতা বোঝা যায়নি। যেমন মিডিয়াতে নানা গুণ বলা সত্ত্বেও, ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতের স্থানীয় ছোটো ফল গার্সিনিয়া কাম্বোগিয়া বা মালাবার তেঁতুল, সবুজ চা নির্যাস ওজনের ওপর কোন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না। দৈনন্দিন স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকায় এই ধরনের পরিপূরকগুলো মাত্রা বজায় রেখে রাখা নিরাপদ। তবে পরিপূরক হিসেবে এগুলো খেতে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + eighteen =