মশা কীভাবে মানুষ খুঁজে কামড়ায়

মশা কীভাবে মানুষ খুঁজে কামড়ায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ আগষ্ট, ২০২৪
মশা কীভাবে মানুষ খুঁজে কামড়ায়

মশার কামড় শুধুই বিরক্তিকর নয়, বিশ্বের অনেক জায়গায় এটি ভীতিপ্রদও বটে। এডিস ইজিপ্টি, মশার প্রজাতির কারণে প্রতি বছর ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু, ইয়েলো ফিভার, জিকা এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়। আবার অ্যানোফিলিস গাম্বিয়া, ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী পরজীবী ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান শুধুমাত্র ম্যালেরিয়ার কারণে প্রতি বছর ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর হয়। প্রকৃতপক্ষে, মশাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণীর খেতাব দেওয়া হয়েছে। পুরুষ মশা নিরীহ, তবে স্ত্রীদের ডিমের বিকাশের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। মশা কীভাবে তাদের হোস্টদের খুঁজে পায় সে বিষয়ে বহু দিন ধরে গবেষণা চলেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মশারা তাদের হোস্ট খোঁজার ক্ষেত্রে কোনো একক সংকেতের উপর নির্ভর করে থাকে না। পরিবর্তে, তারা বিভিন্ন দূরত্ব জুড়ে বিভিন্ন ইন্দ্রিয় থেকে তথ্য একত্রিত করে। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় গবেষকরা ইনফ্রারেড বিকিরণকে আর একটি সংকেত হিসেবে শনাক্ত করেছেন। একটি উত্স থেকে ইনফ্রারেড বিকিরণ, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মানুষের গন্ধের সাথে মিলিত হলে মশার সামগ্রিক হোস্ট খোঁজার আচরণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। হোস্ট খোঁজার সময় মশারা এই ইনফ্রারেড উৎসের দিকে অপ্রতিরোধ্যভাবে এগিয়ে যায়। গবেষকদের মতে এডিস ইজিপ্টি মশা মানুষ হোস্ট খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ। কীভাবে তারা এই দক্ষতা অর্জন করেছে এই গবেষণাটি তার উপরেই আলোকপাত করে। এটা সুপ্রতিষ্ঠিত যে এডিস ইজিপ্টির মতো মশারা দূর থেকে হোস্টদের খুঁজতে একাধিক সংকেত ব্যবহার করে। আমাদের নিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড, শরীরের গন্ধ, তাপ, দেহের আর্দ্রতা এবং দৃষ্টি- এই সব সংকেতের সাহায্য তারা নেয়। তবে, এই প্রতিটি সংকেতের সীমাবদ্ধতা আছে। পতঙ্গের দৃষ্টিশক্তি কম। আর দমকা হাওয়া অথবা মানুষের দ্রুত চলাচল তাদের রাসায়নিক শনাক্তকরণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই গবেষকরা মনে করেন হয়তো মশারা ইনফ্রারেড বিকিরণের মতো আরও নির্ভরযোগ্য দিকনির্দেশক সংকেত শনাক্ত করতে পারে। প্রায় ১০ সেন্টিমিটারের মধ্যে, মশা আমাদের ত্বক থেকে উত্থিত তাপ শনাক্ত করতে পারে। এবং তারা যখন আমাদের শরীরে বসে তখন তারা সরাসরি আমাদের ত্বকের তাপমাত্রা অনুভব করতে পারে। বলা যায় তাদের ইন্দ্রিয় তাপ স্থানান্তরের দুটি পদ্ধতির সাহায্য নেয়- পরিচলন অর্থাৎ বায়ুর মতো একটি মাধ্যমের সাহায্যে তাপ স্থানান্তর এবং প্রবাহ অর্থাৎ সরাসরি স্পর্শের মাধ্যমে তাপ স্থানান্তর। কিন্তু তাপ থেকে শক্তি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গে রূপান্তরিত হলে তা দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। মশারা এই ইনফ্রারেড বিকিরণের সাহায্য নেয়। মানুষের শরীর ইনফ্রারেড বিকিরণ নির্গত করে যা দৃশ্যমান আলোর চেয়ে কম ফ্রিকোয়েন্সির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ। এই বিকিরণ যেখানে আঘাত করে সেই তলও পরে গরম হয়ে যায়। পিট ভাইপারের মতো প্রাণীরা এই উষ্ণতার সাহায্যে শিকার ধরে। গবেষকদের মতে এডিস ইজিপ্টির মতো মশারাও এই বিকিরণের সাহায্য নেয়। মশার অ্যান্টেনার অগ্রভাগে তাপ সংবেদনশীল স্নায়ু ও একধরনের প্রোটিন, TRPA1, রয়েছে যা তাদের ইনফ্রারেড বিকিরণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
এই গবেষণার ফলাফল কাজে লাগিয়ে কীভাবে মশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় গবেষকরা আজ সেই চেষ্টাতেই রয়েছেন।