নিরক্ষরেখার কাছে অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগরের একটা বড়ো অংশে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বিজ্ঞানীরা বিস্মিত। তারা ক্রান্তীয় আটলান্টিক মহাসাগরে এই হঠাৎ শীতলতার কারণ বোঝার চেষ্টা করছেন। যদিও মহাসাগরের এই ঠান্ডা অঞ্চল এখন উষ্ণ হতে শুরু করেছে, কিন্তু এর হঠাৎ শীতলতার কারণ সম্পর্কে তারা এখনও অজ্ঞ। নিরক্ষরেখার উত্তর এবং দক্ষিণে কয়েক ডিগ্রি বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে আটলান্টিক মহাসাগরের অংশ ঠান্ডা হতে শুরু করেছিল। ৪০ বছরেরও বেশি উষ্ণ থাকার পরে জুনের শুরু থেকে এই অংশ ঠান্ডা হতে শুরু করে, যা জুলাইয়ের শেষের দিকে সবচেয়ে ঠান্ডা হয়।
ফ্লোরিডার মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, ফ্রাঞ্জ টুচেন বলেছেন এই অঞ্চল গত কয়েক বছরে ঠান্ডা এবং উষ্ণ পর্যায়ের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করছে। তবে বর্তমানে এখানকার তাপমাত্রার রেকর্ড উচ্চ থেকে নিম্নে হঠাৎ যেভাবে চলে গেছে তা অভূতপূর্ব। পূর্বাভাস অনুযায়ী আটলান্টিক নিনার শুরুতে শীতল হওয়া শুরু হয়েছে। এটা একটা আঞ্চলিক জলবায়ু প্যাটার্ন যাতে পশ্চিম আফ্রিকা জুড়ে বৃষ্টিপাত হয়। এই জলবায়ুতে, ঘানা, নাইজেরিয়া এবং ক্যামেরুনের মতো গিনি উপসাগরের কাছাকাছি অন্যান্য দেশগুলির সাথে উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলে বৃষ্টিপাত হ্রাস পায়। তবে প্রশান্ত মহাসাগরের মতো আটলান্টিকের লা নিনা এত শক্তিশালী নয়। ২০১৩ সালের পরে এই ঘটনা আর ঘটেনি। যদি শীতল তাপমাত্রা আগস্টের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকত, তাহলে বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করতে পারতেন এটা আটলান্টিক নিনার কারণে হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে, জলের ঠান্ডা পকেট গরম হয়ে গেছে। তাই ইতিমধ্যেই তারা নিশ্চিত যে এই ঘটনা আটলান্টিক নিনা হিসেবে বলা যাবে না।
বিজ্ঞানীরা এই ঠান্ডা অঞ্চল ব্যাখ্যা করার জন্য সম্ভাব্য জলবায়ু প্রক্রিয়াগুলির কিছু মডেল তৈরি করেছেন, যেমন বায়ুমণ্ডলে প্রচুর তাপ প্রবাহ বা সমুদ্র এবং বায়ু স্রোতের আকস্মিক পরিবর্তন। কিন্তু সেগুলো কোনোটাই এই ঘটনার চালক নয়। এই শীতলতা মানব-চালিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গবেষকদের মতে এটা নিরক্ষীয় আটলান্টিকের উপর জলবায়ু ব্যবস্থার একটা প্রাকৃতিক পরিবর্তন। স্যাটেলাইট, সামুদ্রিক বয়া ও অন্যান্য আবহাওয়া সংক্রান্ত সরঞ্জামের তথ্য ব্যবহার করে, জলবায়ু বিজ্ঞানীরা ঠান্ডা অংশ ও আশেপাশের মহাদেশগুলিতে এর আসন্ন প্রভাব খোঁজার চেষ্টা করছেন। তারা মনে করছেন, এর কোনো নতুন পরিণতি থাকতে পারে।