শুষ্ক গরমে শহরের বাড়িঘর কীভাবে ঠাণ্ডা রাখা সম্ভব

শুষ্ক গরমে শহরের বাড়িঘর কীভাবে ঠাণ্ডা রাখা সম্ভব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

 

বিশ্বজুড়ে যেভাবে গরম বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঝড়, সাইক্লোন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর এর অবশ্যম্ভাবী ফল বিদ্যুতের জোগান বন্ধ হওয়া, আর গরমে মানুষের কষ্ট বাড়া। বেশিরভাগ শহুরে আধুনিক বাড়ি বাতানুকূল ব্যবস্থার বন্দোবস্ত থাকবে, এমনভাবে তৈরি। ফলে লোডশেডিং হলে মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকেনা। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই নানা সভ্যতায় মানুষ গরমের মোকাবিলার জন্য নানা ধরনের বাড়ি বানাতো।
বর্তমানে দক্ষিণ ইরাকে, ৬০০০ বছর আগে সুমেরীয় সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল। সেখানকার বাড়ির দেওয়ালগুলো ছিল পুরু আর জানলা ছিল ছোটো, যাতে বাইরের তাপ ভেতরে কম প্রবেশ করতে পারে, আর ঘরের ভেতর ঠান্ডা থাকে। এরা দেওয়াল ও ছাদ রোদে পোড়া ইট, কাদা দিয়ে তৈরি ছিল, যা দিনের বেলা গরম শোষণ করে আর রাতে ছাড়ে। এক বাড়ির দেয়ালের গা থেকেই অন্য বাড়ি তৈরি হত, যাতে সূর্যালোকে বেশি উন্মুক্ত না হতে হয়। আলো হাওয়া প্রবেশের জন্য ছোটো উঠোন থাকত। সরু রাস্তা ছায়ায় ঢাকা থাকত, যাতে পথচারীরা আরামে যাতায়াত করতে পারে।
প্রাচীন মিশরের মানুষ পাথর দিয়ে প্রাসাদ বানাতো যার সাথে বড়ো চত্বর থাকত। থাকার বাড়ি কাদামাটি দিয়ে তৈরি হত। মিশরীয়রা মুলকাফ নামে এক ধরনের প্রযুক্তির আশ্রয় নিত, যেদিকে হাওয়া বয়ে যায় সেদিকের দেয়ালে বাতাস ঢোকার জন্য লম্বা ফাঁক থাকত। এই উইন্ড ক্যাচারের সাহায্যে বড়ো স্থানও ঠান্ডা রাখা যেত। মজার বিষয় হল আধুনিক কালে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়াতে বাতানুকূল যন্ত্রের পরিবর্তে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যা খুব গরমেও আরামপ্রদ।
দক্ষিণ -পশ্চিম আমেরিকাতেও কাদামাটি আর রোদে পোড়া ইট ব্যবহার করে হত আর বাড়িগুলো দক্ষিণমুখী করা হত। যাতে গরমে বাড়িতে রোদ প্রবেশ কম হয়, আর শীতকালে সূর্য বিকিরণ প্রবেশ করে। বর্তমানে দেখা যায় জল ব্যবস্থাপনাও বিশেষ ভালো নয়। বৃষ্টির জল শহর থেকে নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করা থাকে। কিন্তু শহরে জল সরবরাহ হয়তো অনেক দূর থেকে ব্যবস্থা করতে হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ স্পেনের বাড়িগুলোতে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা ছিল। ছাদ থেকে জল নিয়ে শৌচাগারে সরবরাহ করা হত, ছাদের ঢাল এমনভাবে করা হত, যাতে জল বাড়ির সবজিক্ষেতে পড়ে। এখন আর্জেন্টিনার মেন্ডোজাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ভারত এবং অন্যান্য দেশে বিজ্ঞানীরা বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ভালো উপায় অন্বেষণ করছেন৷ বৃষ্টির জল সংগ্রহ এবং সবুজায়ন শহুরে স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর কার্যকর কৌশল হিসাবে স্বীকৃত। এই প্রাচীন সভ্যতার বাড়ির গঠন বোঝায় কীভাবে গরম, শুষ্ক সময়ে আরাম পাওয়া যায়। প্রাচীন সভ্যতাগুলো গরম, শুষ্ক জলবায়ুতে শীতল থাকার জন্য যে পন্থা অবলম্বন করত, আধুনিক পরিকল্পনাতে তা কাজে লাগানো যেতে পারে। হয়তো উন্নত তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক শহরের গঠন পালটে ফেলা সহজ নয়। তবে কিছু কৌশল গ্রহণ করলে গরম এবং শুষ্ক জলবায়ুতে আরামদায়ক জীবনযাপন পাওয়া যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − twelve =