মাড়ক রোগের সূত্রপাত পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে

মাড়ক রোগের সূত্রপাত পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পশু পাখিদের মাড়ক রোগ পৃথিবীর দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। বিজ্ঞানীরা আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল, অ্যান্টার্কটিকে, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে অত্যন্ত সংক্রামক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (HPAIV) চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে কখনও এমন মারাত্মক স্ট্রেনের হদিশ পাওয়া যায়নি এই স্থানে। ২০২১ সাল থেকে, বিশ্বব্যাপী H5N1 ক্লেড 2.3.4.4b ভাইরাস বন্য পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাস করেছে, ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসের জিনগত মূল্যায়ন থেকে জানা যায় যে এটি এখন অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পরতে শুরু করেছে, সম্ভবত পরিযায়ী পাখিদের মাধ্যমে দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বহুদিন আগেই বিজ্ঞানীরা এই মুহূর্তটির আশঙ্কা করেছিলেন। এই অঞ্চলের সুপরিচিত প্রজাতি, অ্যালবাট্রস এবং পেঙ্গুইন বর্তমানে একটি অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। গবেষকদের মতে অ্যান্টার্কটিকা এবং তার পাশাপাশি দ্বীপপুঞ্জে বহু বাস্তুতন্ত্র রয়েছে যার অন্তর্গত বেশ কিছু পাখি এবং সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রজাতি। যে সব রোগে মৃত্যুহার বেশি সেই রোগের প্রাদুর্ভাব তাই সামুদ্রিক পাখি ও প্রাণীদের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। ২০২৩ সালে এই ঘটনার সূত্রপাত। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের (BAS) গবেষকরা পেট্রেল নামের এক বিশাল সামুদ্রিক পাখির শারীরিক অস্থিরতা দেখতে পায়। পাখিটির নড়াচড়া করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। পাখিটি মারা গেলে, আর এক সামুদ্রিক পাখি নাম ব্রাউন স্কুয়াস তার মৃতদেহ খায়। তারপর তাদের শরীরেও ঝাঁকুনির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। দু দিন পরে, গবেষকরা দ্বীপগুলোতে সর্বোচ্চ সংখ্যক পাখির মৃত্যুর রেকর্ড করেছেন। এরপর ২০২৩-এর ডিসেম্বরের শুরুতে সিলমাছের দু ধরনের প্রজাতি এলিফ্যান্ট সিল এবং অ্যান্টার্কটিক ফার সিলদের কাশতে দেখা যায়, তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সেই সময়েই গবেষকরা দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপপুঞ্জের আশেপাশে আটটি ভিন্ন স্থানে মোট ৩৩টি পাখির মৃতদেহ এবং ১৭টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর মৃতদেহ সংগ্রহ করেছেন। প্রায় ৬৬%-এর HPAIV H5N1 পজিটিভ ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় নিকটবর্তী ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের আরও দুটি পাখির প্রজাতি – ব্ল্যাক ব্রোড অ্যালবাট্রস এবং ফুলমার। যদিও এখনও ভাইরাসটি অ্যান্টার্কটিকের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেনি, তবে কিছু গবেষক মনে করেন যে প্রাণীদের মধ্যে এই মড়ক শুরু হয়ে গেছে। গবেষকদের ধারণা আপাতত এই বার্ড ফ্লু একমাত্র অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ছড়ায়নি। দক্ষিণ আমেরিকায়, প্রাণীদের মধ্যে এই মড়ক গুরুতর প্রমাণিত হয়েছে, পাখি এবং সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ব্যাপকহারে মৃত্যু ঘটাচ্ছে। সম্প্রতিকালে বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতো, দক্ষিণ আমেরিকার বন্যপ্রাণী ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেনি। তাই এই সংক্রমণ থেকে তাদের মৃত্যুর হার কিছু প্রজাতির মধ্যে ৪০%-এর মতো বেশি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল যে সমস্ত প্রাণীদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ কফিনে শেষ পেরেকের মতো কাজ করবে। গবেষণাটি নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে।