অন্য ভাবনা চাই

অন্য ভাবনা চাই

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রতি দিন উৎপাদিত কঠিন বর্জ্যের এক বৃহৎ অংশ কোনও প্রক্রিয়া ছাড়াই আঁস্তাকুড়ে জমা হয়। তবে স্তূপীকৃত বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজটি আশানুরূপভাবে হয় না। লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেছেন কীভাবে অসংগৃহীত স্তূপীকৃত আবর্জনা এবং প্লাস্টিক বর্জ্য খোলা জায়গায় পোড়ালে পরিবেশের ক্ষতি করে। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলের সাহায্যে সারা বিশ্বব্যাপী ৫০,০০০-এরও বেশি পৌরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া দেখার চেষ্টা করেছেন। তারা দেখার চেষ্টা করেন কতটা বর্জ্য তৈরি হয় এবং তার কী প্রক্রিয়াকরণ ঘটে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত তাদের এই গবেষণায় জানা যায় ২০২০ সালে এক বিশাল পরিমাণ, প্রায় ৫২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পণ্য পরিবেশে জমা হয়েছে। যদি আমরা এর পরিমাণ কল্পনা করার চেষ্টা করি তাহলে বোঝা যাবে পরিমাণটা কত বেশি- বর্জ্য প্লাস্টিক একটি লাইনে বিছিয়ে রাখলে তা আমাদের পৃথিবীকে ১৫০০ বার চক্রাকারে ঘুরবে। অধ্যয়নে আরও জানা যায় বিশ্বের প্লাস্টিক দূষণের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংগ্রহ না করা আবর্জনার অংশ। প্রায় ১.২ বিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১৫% বর্জ্য সংগ্রহ পরিষেবা পান না। গবেষণায় আরও দেখা যায় যে ২০২০ সালে প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক অর্থাৎ সমগ্র প্লাস্টিকের দূষণের ৫৭% খোলা জায়গায়, বাড়িতে, রাস্তায় এবং আবর্জনার স্তূপে কোনও পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। প্লাস্টিক পোড়ানো মানুষের ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক- মানুষের স্নায়ুবিকাশে, প্রজননে ক্ষতি হয় এবং জন্মগত ত্রুটির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই প্লাস্টিক। উদ্বেগের বিষয় হল গবেষকরা প্লাস্টিক দূষণের নতুন হটস্পট চিহ্নিত করেছেন, আর সে দেশ হল ভারতবর্ষ। তালিকায় আমাদের দেশকে অনুসরণ করেছে নাইজেরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া৷ প্লাস্টিক দূষণের প্রায় এক পঞ্চমাংশ আসে ভারত থেকে প্রায় ৯.৩ মিলিয়ন টন, নাইজেরিয়া থেকে ৩.৫ মিলিয়ন টন এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩.৪ মিলিয়ন টন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের উন্নতির ফলে চিন, যা পূর্বে প্রথম স্থানে ছিল সে দেশ এখন ২.৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন করে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রের স্থান ১৩৫।
নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ অনেক কম, কিন্তু উৎপন্ন বর্জ্যের একটি বড়ো অংশ হয় সংগ্রহ করা হয় না অথবা আবর্জনার স্তূপে ফেলা হয়। ভারতের স্থান সর্বপ্রথম কারণ আমাদের দেশের জনসংখ্যা বিশাল, প্রায় ১.৪ বিলিয়ন, এবং অনেকক্ষেত্রেই বেশিরভাগ বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় না। গবেষকদের মতে এটি একটি জরুরি বিশ্বব্যাপী মানব স্বাস্থ্য সমস্যা – একটি নিরবিচ্ছিন্ন সংকট। যে সব মানুষদের বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় না তাদের বর্জ্য জমা করা বা পুড়িয়ে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। মানুষ মনে করে প্লাস্টিক বর্জ্য পুড়িয়ে ফেললে তা সাময়িকভাবে ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্লাস্টিক বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে পোড়ানোর ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে তাই অন্য ভাবনা চাই।