বিজ্ঞানীরা প্রাণীদের ত্বক স্বচ্ছ করে তুলেছেন

বিজ্ঞানীরা প্রাণীদের ত্বক স্বচ্ছ করে তুলেছেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ত্বক স্বচ্ছ

‘ইনভিসিবল ম্যান’ – অদৃশ্য মানুষকে নিয়ে বিখ্যাত এক উপন্যাস। একেই এখন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সত্যি করে তুলছেন। তারা জীবিত ইঁদুরের মাথার খুলি, পেটের ত্বককে জলের মিশ্রণ এবং টারট্রাজিন নামে খাবারের রঙ প্রয়োগ করে স্বচ্ছ করে তুলেছেন। ডালাসের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ড. জিহাও ওউ সায়েন্স জার্নালে তাদের এই গবেষণার কথা জানিয়েছেন। জীবন্ত ত্বক একটা বিক্ষিপ্ত মাধ্যম হওয়াতে আলো ছড়িয়ে দেয়, যে কারণে এর ভেতরের অংশ দেখা যায় না। গবেষকরা টারট্রাজিন নামে হলুদ রঞ্জককে ত্বকের সাথে মিশিয়েছেন। এর অণু বেশিরভাগ আলো, বিশেষ করে নীল এবং অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে। আলাদাভাবে, এরা বেশিরভাগ আলোকে তাদের মধ্য দিয়ে যেতে বাধা দেয়। কিন্তু ত্বকের সাথে মেশালে তা ত্বককে স্বচ্ছ করে তুলছে। জলে আলো-শোষণকারী অণুগুলো দ্রবীভূত করার ফলে দ্রবণের প্রতিসরণ সূচক পরিবর্তন হয়ে চামড়া স্বচ্ছ হয়। গবেষকরা ইঁদুরদের খুলি, পেটে এই রঞ্জক ও জলের দ্রবণ ঘষে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এটা ইঁদুরদের শরীরে শোষিত হয়ে গেলে চামড়া স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। স্বচ্ছতা আসতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। এই রঞ্জক ধুয়ে ফেললে চামড়া আবার আগের মতো হয়ে যায়। আর শরীরে শোষিত রঙ বিপাকের পর মূত্র দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে যায়।
খুলির স্বচ্ছ চামড়া দিয়ে গবেষকরা মস্তিষ্কে রক্তনালীগুলো সরাসরি দেখতে পেয়েছেন। আর পেটের স্বচ্ছতা তাদের অভ্যন্তরীন অঙ্গ, আর পেরিস্টালসিস অর্থাৎ খাদ্যের বিপাকের জন্য পৌষ্টিক নালীর পেশির সংকোচন দেখিয়েছে। যে রঞ্জক ব্যবহার করে হয়েছে তা ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ছাড়পত্র পাওয়া, বেশ সস্তা ও কার্যকরী। মানুষের শরীরে এটা এখনও প্রয়োগ করা হয়নি। মানুষের চামড়া ইঁদুরের তুলনায় ১০ গুণ পুরু। কি ডোজ দেওয়া হবে বা কীভাবে তা দিলে চামড়া ভেদ করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। বর্তমানে শরীরের ভেতরের কোনো রোগ নির্ণয়ের জন্য আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এ জাতীয় পদ্ধতিগুলো বেশ খরচসাপেক্ষ। গবেষকদের মতে তাদের আবিষ্কৃত প্রযুক্তি সহজে সস্তায় রোগ নির্ণয় করতে দেবে। গবেষকরা টারট্রাজিনের চেয়েও আরও কার্যকরী অণুর খোঁজ করছেন। গবেষকরা এই প্রযুক্তির পেটেন্টের জন্যও আবেদন করেছেন।