বৃষ্টির জলে জীবনের সূত্রপাত

বৃষ্টির জলে জীবনের সূত্রপাত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
বৃষ্টির জলে

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির জল জীবনের উৎপত্তির কারণ। এই জল প্রথম কোশকে আকার আকৃতি দিয়েছিল। ছোট্ট আরএনএ কণা থেকে ব্যাকটেরিয়া, গাছ-পালা, নানা প্রাণীর উৎপত্তির জন্য দায়ী বৃষ্টির জল। বিজ্ঞানীরা প্রাইমোর্ডিয়াল স্যুপকে জীবনের প্রথম বিল্ডিং ব্লক বলে মনে করেন। প্রাইমোর্ডিয়াল স্যুপ তত্ত্ব অনুসারে, পৃথিবীর প্রথমদিকে বায়ুমণ্ডলের অজৈব পদার্থ থেকে ছোটো জৈব অণু (মনোমার) এবং জটিল জৈব অণু (পলিমার) নিয়ে এই প্রাইমোর্ডিয়াল স্যুপ তৈরি হয়। আর এই জড় পদার্থ থেকেই সূত্রপাত হয় জীবনের। কিন্তু প্রাইমোর্ডিয়াল স্যুপে ভাসমান আরএনএ কণাতে কীভাবে কোশ পর্দা সৃষ্টি হল যার থেকে নানা ধরনের কোশ পরবর্তিতে বিবর্তিত হয়েছে তা বিজ্ঞানীদের এক প্রাথমিক প্রশ্ন।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিটজকার স্কুল অফ মলিকুলার ইঞ্জিনিয়ারিং (ইউচিকাগো পিএমই), হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ এবং ইউচিকাগো রসায়ন বিভাগের জীববিজ্ঞানীরা তাদের রিসার্চ পেপারে এই বিষয়ে একটা সমাধান প্রস্তাব করেছেন। ইউ শিকাগো পিএমই পোস্টডক্টরাল গবেষক আমান আগরওয়াল, ডিন এমেরিটাস ম্যাথিউ তিরেল এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জীববিজ্ঞানী জ্যাক সজোস্টাক দেখান কীভাবে বৃষ্টির জল একটা জাল রচনা করে কোশের দেয়াল তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। তাদের মতে এই পরিবর্তনের জন্য প্রায় ৩৮ হাজার লক্ষ বছর আগে প্রোটোসেলে আরএনএ-এর ক্ষুদ্র কণা থেকে ব্যাকটেরিয়া, উদ্ভিদ, প্রাণী, মানুষের উদ্ভব হয়।
গবেষকরা “কোসার্ভেট ড্রপলেটস” – প্রোটিন, লিপিড এবং আরএনএ অণু দেখেন। ঘন মাইক্রো-কোসারভেটস বা কোসার্ভেট ফোঁটা জলীয় মিশ্রণ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গঠিত হয় আর ঝিল্লি ছাড়াই স্থিতিশীল থাকে। যেন এই ফোঁটাগুলো, জলে রান্নার তেলের ফোঁটার মতো ভাসতে থাকে। এদেরকে দীর্ঘকাল প্রোটোসেল হিসেবে ধরা হত। কিন্তু এই ফোঁটাগুলো খুব দ্রুত একে অপরের মধ্যে অণু বিনিময় করে। এতে বিবর্তনের মূল পদক্ষেপ, আরএনএ-র নতুন, সম্ভাব্য কার্যকর মিউটেশন হওয়ার সম্ভাবনা লুপ্ত হয়ে যায়। কারণ আরএনএ অন্যান্য আরএনএ ড্রপলেটের সাথে খুব দ্রুত অণু বিনিময় করে একই রকম হয়ে -র মধ্যে যাবে। এতে দুটো আরএনএকোনো পার্থক্য বা কোনো প্রতিযোগিতা থাকবেনা, মানে কোন বিবর্তন নেই। এরএনএ-র নমুনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আগরওয়াল দেখেন, পাতিত জলে কোসার্ভেট ফোঁটা ফেললে, আরএনএ বিনিময়ের সময় কয়েক মিনিট থেকে বেড়ে কয়েক দিন পর্যন্ত হয়। আর এই বর্ধিত সময় মিউটেশন, প্রতিযোগিতা, বিবর্তনের জন্য যথেষ্ট। তারা হিউস্টোন থেকে বৃষ্টির জল ও পরীক্ষাগারের জলের অম্লত্ব বাড়িয়ে এই কোসার্ভেট ফোঁটা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন, এর চারপাশে পাতলা ঝিল্লি তৈরি হচ্ছে। তারা তাদের গবেষণার কথা সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ প্রকাশিত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − three =