গ্রীনল্যান্ড এখন খনি শিল্পপতিদের নতুন ‘সিঙ্গুর’!

গ্রীনল্যান্ড এখন খনি শিল্পপতিদের নতুন ‘সিঙ্গুর’!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ অক্টোবর, ২০২১

গ্রীনল্যান্ড নিয়ে প্রবল আগ্রহ মাইনিং কোম্পানিগুলোর। চারদিকে গ্লেসিয়ার। তার মাঝে বসে আছেন একটি মাইনিং কোম্পানির প্রতিনিধিরা। যেখানে বসে আছেন সেখানে অবশ্য বরফ নাই! অজস্র পাথরের টুকরো। গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল। মাইনিং কোম্পানির প্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছেন ভূতত্ববিদ অ্যান্ডার্স নর্বি-লি। গত ৯ বছর ধরে তার কাজ গ্রীনল্যান্ডের এই দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিশাল বিশাল পাথর নিয়ে গবেষণা করা। তার দাবি, এই পাথরের জন্ম হয়েছিল পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার সময়!
কিন্তু মাইনিং কোম্পানি কেন নিয়ে গিয়েছে ভূতত্ববিদকে? পাথরের মধ্যে কী আছে জানতে! আর সেই জানা থেকেই গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই অঞ্চল বহুজাতিক মাইনিং কোম্পানিগুলোর কাছে প্রবল আকর্ষণের হয়ে উঠেছে! ন্যানো গাড়ি তৈরির আগে ‘সিঙ্গুরের’ যেরকম আকর্ষণ ছিল টাটা এবং অন্যান্য শিল্পপতিদের কাছে। কারণ ভূতত্ববিদদের সহায়তায় খনি শিল্পপতিরা জেনে গিয়েছেন গ্রীনল্যান্ডের এই অঞ্চল জুড়ে রয়েছে খনিজদ্রব্যের ভাণ্ডার! কপার, টাইটেনিয়াম থেকে শুরু করে অ্যালুমিনিয়াম এবং সকলের ওপরে দুষ্প্রাপ্য প্ল্যাটিনাম!
গ্রীনল্যান্ড কিন্তু এখনও স্বাধীন ও সার্বোভৌম হতে পারেনি। ১৯৫৩ সাল থেকে তারা ডেনমার্কের কলোনি। ৫৭ হাজার মানুষের বাস দেশটায়। তাদের প্রায় সকলেই নির্ভরশীল মাছ ধরা এবং ডেনমার্কের সরকার যা অনুদান দেয় তার ওপর। হঠাৎ পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। ওখানে খননের কাজ শুরু হলে, খনিজদ্রব্য তোলা শুরু হলে ডেনমার্কের ঘরে ঢুকবে রয়্যাল্টি বাবদ প্রতি বছর ২৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!
কিন্তু সম্ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নের করা সতর্কবার্তা। ডেনমার্কের সরকার ইতিমধ্যে মাটি খুঁড়ে ন্যাচারাল গ্যাস আর তেল তোলা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ইউরেনিয়াম তোলাও আট বছর আগে থেকে নিষিদ্ধ হয়ে রয়েছে। সরকার চাইছে না নিষেধাজ্ঞা তুলতে। এই অবস্থায় গ্রীনল্যান্ডের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা হবে না খননের কাযে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরিবেশ দূষণ কমানোর চেষ্টা করা হবে?
খনিটিকে পরিচর্যা করছে গ্রীনল্যান্ড অ্যানথ্রোসাইট মাইনিং। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, ফাইবার গ্লাস তৈরির জন্য ওই খনি থেকে ১২০ টন গুঁড়ো অ্যানথ্রোসাইট তোলা হবে প্রাথমিভাবে। আনথ্রোসাইট অনেক কম তাপমাত্রায় গলে যায় এবং খুব কম মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিসরণ হয়। মাইনিং-এর তরফে আরও জানানো হয়েছে, অ্যালুমিনিয়াম তুললেও সেখান থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ খুবই কম হবে। আর অ্যালুমিনিয়াম এমন একটি খনিজদ্রব্য যাকে সম্বল করে কানাডা বা নরওয়ের মত দেশের সঙ্গে ব্যবসাও করা যেতে পারে।
আপাতত গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই অঞ্চলের ওপর সরকারের যা ভাবনা তাতে আগামী আট থেকে ১০ বছরে এই অঞ্চলের পাথর ফাটিয়ে অ্যালুমিনিয়াম হয়ত তোলা হবে। গড়ে উঠবে অ্যালুমিনিয়াম শিল্প। তাতে যদি গ্রীনল্যান্ডের মানুষের আর্থিক উন্নয়ন হয় তাহলে সেইটুকুই প্রাপ্তি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − thirteen =