গাছেদের ভাষা আমরা কিছুদিন পরেই বুঝতে পারব

গাছেদের ভাষা আমরা কিছুদিন পরেই বুঝতে পারব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
গাছেদের ভাষা

মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্য দুটো, এক হাতের ব্যবহার, অন্যটা হল কথা বলে নিজের মনের ভাব আদান প্রদান করা। এটা তাকে অন্যান্য প্রজাতি থেকে ভিন্ন করেছে। আমরা যেমন নিজেদের মনের কথা জানাতে পারি, নানা জটিল বিষয়ে আলোচনা করতে পারি তেমন বিপদের সংকেত পাঠিয়ে অন্যদের সাবধান করতে পারি। অনেকের ধারণা গাছেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। গাছরা সত্যি নিজেদের মধ্যে বেশ জটিল পদ্ধতিতে যোগাযোগ রক্ষা করে। কথা বলতে না পারলেও তারা কীভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে? মানুষ যেভাবে কথা না বলেও শারীরিক ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে সেভাবে। আমরা আমাদের দেখা, শোনা, ঘ্রাণ, স্বাদ, স্পর্শের মাধ্যমে অব্যক্তভাবে জগতকে দেখে থাকি।
উঠোনের ঘাস ছাঁটার সময় ঘাসের এক ধরনের গন্ধের সাথে আমরা বেশ পরিচিত। ঘাসগুলো উদ্বায়ী, রাসায়নিক নির্গত করে আশেপাশের গাছপালাকে সম্ভাব্য শত্রুর উপস্থিতি সম্বন্ধে সাবধান করে দেয়। অর্থাৎ গাছপালা শ্রুতিগ্রাহ্য সংকেতের বদলে রাসায়নিকের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে। কিন্তু শুধুমাত্র উদ্বায়ীর সাহায্যে গাছ যোগাযোগ স্থাপন করেনা।
গাছ তার প্রতিবেশীদের কাছে শিকড়, ভূগর্ভস্থ ছত্রাক এবং মাটির জীবাণুর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায়। ছত্রাকের এই নেটওয়ার্ক গাছপালাগুলোকে ভূগর্ভস্থে সংযুক্ত করে, তারা জল, পুষ্টি, নানা তথ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে পূর্ণ গাছ অল্পবয়সী গাছদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে আর গাছ একে অপরকে বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে, যেমন কীটপতঙ্গের আক্রমণ সম্বন্ধে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এই যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় প্রায় ৮০% গাছ আসে।
ইলেক্ট্রোফিজিওলজি নতুন এক বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র যেখানে উদ্ভিদ কীভাবে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠিয়ে যোগাযোগ করে তা অধ্যয়ন করা হয়। প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতির সাথে, গত কয়েক বছরে এই বিশেষ ক্ষেত্র বিকাশিত হয়েছে। আধুনিক গ্রীনহাউসগুলোতে উদ্ভিদের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংকেত যোগাযোগ ব্যবস্থা বুঝে কতটা জল দিতে হবে বা পুষ্টির ঘাটতি আছে কিনা তা বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করছেন। বিজ্ঞানীরা আকুপাংচারের সূচের মতো ছোটো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম লাগিয়ে দেখেছেন, বৈদ্যুতিক তরঙ্গের পরিবর্তনে গাছে জল সংবহন, পুষ্টি, আলোর উপস্থিতিতে শর্করা তৈরি কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। রাসায়নিক, বন উজাড় বা জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে মাটিকে নষ্ট করলে এই নেটওয়ার্কগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে জল এবং পুষ্টি চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে। যাতে গাছপালার সচেতনতা কমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যহত হতে পারে। আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার, সমস্ত জীবজগত গাছপালার ওপর নির্ভরশীল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five − 4 =