তাপমাত্রা বৃদ্ধি মোকাবিলায় গাছেদের কারসাজি

তাপমাত্রা বৃদ্ধি মোকাবিলায় গাছেদের কারসাজি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ অক্টোবর, ২০২৪

পাতার পৃষ্ঠে আণুবীক্ষণিক ছিদ্র থাকে। এদের বলা হয় স্টোমাটা বা পত্ররন্ধ্র। এই স্টোমাটার মাধ্যমে উদ্ভিদ শ্বাস নেয়। আমরা যেমন বাতাস থেকে অক্সিজেন নিই এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি গাছেরা ঠিক তার উল্টো করে- বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নেয় এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। এছাড়াও বাতাসে মিশে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। গাছেদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এই পত্ররন্ধ্র নিয়ন্ত্রণ করে বাষ্পমোচনের মাধ্যমে তারা কতটা জল নির্গত করবে। সালোকসংশ্লেষণ এবং বৃদ্ধির জন্য কতটা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করবে তাও নিয়ন্ত্রণ করে। তবে আগে যা সত্যি ছিল আজ তা অনেকাংশে পরিবর্তিত হচ্ছে। আজ, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা এবং তাপ প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছেরা অতিরিক্ত তাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পত্ররন্ধ্র প্রশস্ত করে বাষ্পমোচন করছে। ফলে গাছেদের ক্ষতি কম হচ্ছে। কিন্তু বহু বছর জীববিজ্ঞানীরা তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাতার ছিদ্রের মাধ্যমে “শ্বাস” নেওয়া এবং বাষ্পমোচনের প্রক্রিয়া বৃদ্ধির পিছনে জিনগত এবং আণবিক প্রক্রিয়া সম্বন্ধে অবগত ছিলেন না। নিউ ফাইটোলজিস্ট জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা মোকাবিলা করতে গাছপালা দ্বারা ব্যবহৃত দুটি পথ চিহ্নিত করেছে। পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে জিনগত কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পত্ররন্ধ্র খুলে যায়, কিন্তু যদি তাপমাত্রা বেশি বাড়ে তবে অন্য একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পত্ররন্ধ্রের আকার বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা অ্যারাবিডোপসিস থালিয়ানা নামের একটি আগাছা প্রজাতির গাছ এবং গম, ভুট্টা ও ধানের মতো একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ, ব্র্যাচিপোডিয়াম ডিস্টাচিয়ন, নিয়ে অধ্যয়ন করেন। গবেষকরা দেখেন কার্বন ডাই অক্সাইড সেন্সর পত্ররন্ধ্রের গরম-ঠান্ডায় প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পাতা উষ্ণ হয়ে উঠলে এই সেন্সর তা শনাক্ত করে। ফলে পাতায় সালোকসংশ্লেষণের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, কার্বন ডাই অক্সাইড হ্রাস পায় এবং পাতার ছিদ্রগুলো খুলে যেতে শুরু করে।
গবেষণায় একটি দ্বিতীয় তাপ প্রতিক্রিয়া পথও দেখা যায়। প্রচন্ড তাপের ফলে, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণে চাপ পড়ে এবং প্রক্রিয়াটি হ্রাস পায়। সে সময় গাছ, তার কার্বন-ডাই-অক্সাইড সেন্সর সিস্টেমকে উপেক্ষা করে এবং স্বাভাবিক সালোকসংশ্লেষণ-চালিত প্রতিক্রিয়া থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। পরিবর্তে, পত্ররন্ধ্র দ্বিতীয় তাপ প্রতিক্রিয়া পথ বেছে নেয়, এবং নিজেকে ঠান্ডা রাখতে বাষ্পমোচনের প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে “ঘাম” নিঃসরণ করে। গবেষকদের মতে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বেশি তাপমাত্রায় পাতার ছিদ্র কীভাবে কাজ করে এবং আণবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কীভাবে তা নিয়ন্ত্রিত হয় তা আরও ভালোভাবে বোঝা দরকার। গবেষকদের অনুমান এই গবেষণা কৃষিক্ষেত্রে শস্য উৎপাদনে সহায়তা করবে।