পিঁপড়ে পাখির বাসস্থান কেড়ে নিচ্ছে

পিঁপড়ে পাখির বাসস্থান কেড়ে নিচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ অক্টোবর, ২০২৪

পৃথিবীর পৃষ্ঠের মাত্র ২৫% জুড়ে থাকা পর্বতমালা, বিশ্বের ৮৫% উভচর, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রজাতির বৈচিত্র্যময় এক আবাসস্থল। তবে দেখা যাচ্ছে, এই স্থানের মেরুদণ্ডী প্রাণীর আবাসস্থল পিঁপড়ের কারণে পরিবর্তিত হতে পারে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc) এর গবেষণায় দেখা গেছে পার্বত্য অঞ্চলে পাখির প্রজাতির বৈচিত্র্য প্রভাবিত করছে এক শ্রেণির পিঁপড়ে। বারেবারে দেখা যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষুদ্র এই প্রাণীগুলোর অপ্রত্যাশিত ভূমিকা থাকছে। ইকোলজি লেটার্সে প্রকাশিত এই গবেষণা পার্বত্য বাস্তুতন্ত্রে প্রজাতির বন্টন নিদর্শন সম্পর্কে দীর্ঘকালের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। পূর্বের ধারণা অনুযায়ী, পরিবেশগত কারণ যেমন জলবায়ু বিভিন্ন উচ্চতায় প্রজাতির বৈচিত্র্যের প্রাথমিক চালক। কিন্তু এই নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়োটিক মিথস্ক্রিয়া, বিশেষ করে আন্তঃপ্রজাতি প্রতিযোগিতা, জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সেন্টার ফর ইকোলজিক্যাল সায়েন্সেস (CES)-এর সহকারী অধ্যাপক উমেশ শ্রীনিবাসনের নেতৃত্বে, গবেষক দল বিভিন্ন পর্বতশ্রেণি জুড়ে পাখির প্রজাতি পর্যবেক্ষণ করে তার তথ্য ভাণ্ডার বিশ্লেষণ করেছেন৷ তারা গবেষণায় ওকোফিলা পিঁপড়ে আর পোকামাকড় খাওয়া পাখির ওপর নজর দেন। ওকোফিলা পিঁপড়ে তাদের আক্রমণাত্মক আচরণ আর পোকা শিকারের জন্য পরিচিত। এই অনুসন্ধানে আকর্ষণীয় প্যাটার্ন সামনে এসেছে। পর্বতশ্রেণির যেখানে ওকোফিলা পিঁপড়ের উপস্থিত ছিল, পোকামাকড় খাওয়া পাখির প্রজাতি তার প্রায় ৯৬০ মিটারের উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল। গবেষকদের মতে নিম্ন উচ্চতায় খাদ্য সম্পদের জন্য পিঁপড়ের সাথে প্রতিযোগিতা না করে এই পাখিরা পাহাড়ের ওপরে উঠে গেছে।
কার্তিক শঙ্কর, সিইএস-এর অধ্যাপক এবং অধ্যয়নের সহ-লেখক, এই ফলাফলের তাত্পর্যের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘকাল যাবত পাহাড়ে প্রাণীপ্রজাতির বৈচিত্র্যের গ্রাফ কুঁজ-আকৃতির কেন হয় তা জানতে মানুষ আগ্রহী। কিন্তু এতদিন মানুষ বায়োটিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেননি। তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পাখিদের খাদ্য ফুলের মধু বা ফল, অর্থাৎ ওকোফিলা পিঁপড়ের সাথে যাদের খাবার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, তাদের প্রজাতির বৈচিত্র্য পাহাড়ের ক্রমবর্ধমান উচ্চতার সাথে হ্রাস পেয়েছে। এই গবেষণার ফলাফলে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। শ্রীনিবাসন সতর্ক করেছেন, যদি পিঁপড়েরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের রেঞ্জ পরিবর্তন করে, উচ্চ উচ্চতার দিকে যায় তাতে উচ্চ উচ্চতায় পাখির প্রজাতিও প্রভাবিত হতে পারে। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া দরকার।