চাঁদে প্রচুর পরিমাণে বরফ?

চাঁদে প্রচুর পরিমাণে বরফ?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ অক্টোবর, ২০২৪
চাঁদে বরফ?

চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত অঞ্চলের (পিএসআর) বৃহত্তর অংশে বরফের অস্তিত্ব আগেই জানা গিয়েছিল। বর্তমানে গবেষকরা বলছেন, চাঁদে প্রচুর পরিমাণে বরফ রয়েছে। ভবিষ্যতে চন্দ্র অভিযানের জন্য বরফ এক মূল্যবান সম্পদ। বিকিরণ থেকে সুরক্ষা দিতে, মানব অভিযাত্রীদের সহায়তার জন্য বরফে থাকা জল ব্যবহার করা যেতে পারে। এই বরফের জল ভেঙে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন বিভক্ত করে, রকেটের জ্বালানী, শক্তি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বায়ু তৈরি করা যেতে পারে। মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টের, নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের ডাঃ টিমোথি পি ম্যাকক্লানহান বলেছেন নতুন গবেষণায় দেখা গেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর বাইরে পিএসআর-এর মধ্যে বিস্তৃত জলের বরফের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটা চাঁদের ৭৭ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের দিকে। যার মধ্যে ক্যাবিউস, হাওয়ার্থ, শুমেকার এবং ফাউস্টিনি ক্রেটার অন্তর্ভুক্ত। প্ল্যানেটারি সায়েন্স জার্নালে ২ অক্টোবর এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এই অধ্যয়ন চন্দ্র অভিযান পরিকল্পকদের কোথায় বরফ থাকার সম্ভাবনা আছে বা নেই তার মানচিত্র সরবরাহ করতে পারবে। তার সাথে কেন বরফ থাকবে বা থাকবে না তাও জানাবে। নির্ভুলভাবে বরফের আয়তন নির্ধারণ করা না গেলেও, গবেষকরা জানিয়েছেন, ১.২ বর্গ ইয়ার্ড বরফের অঞ্চলের পৃষ্ঠে ৩.৩ ফিট উচ্চ বরফ পাওয়া যেতে পারে।
ধূমকেতু এবং উল্কার প্রভাবে চাঁদের শিলা বা রেগোলিথে বরফ সৃষ্টি হতে পারে। অথবা চন্দ্রের অভ্যন্তর থেকে বাষ্প আকারে জল নির্গত হতে পারে বা সৌর বায়ুতে হাইড্রোজেন এবং রেগোলিথের অক্সিজেনের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা জল গঠিত হতে পারে। পিএসআর সাধারণত চাঁদের মেরুদ্বয়ের কাছে গহ্বর। সূর্যের আলো এখানে কৌণিক গতিতে আসার ফলে খুব কম পটে, তাই এই অঞ্চলে বিলিয়ন বছর ধরে সূর্যের আলো সরাসরি না পড়ায় এই অঞ্চল দীর্ঘকাল যাবত প্রচণ্ড ঠান্ডা। বরফের অণুগুলো উল্কাপিণ্ড, মহাকাশ বিকিরণ বা সূর্যালোক দ্বারা বারবার রেগোলিথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চাঁদের পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে গড়াতে গড়াতে পিএসআর-এ পড়লে সেখানকার প্রচণ্ড ঠান্ডায় আটকা পড়ে জমে যায়।
গবেষকরা মাঝারি-শক্তি, “এপিথার্মাল” নিউট্রন পরিমাপ করে বরফ জমার লক্ষণ শনাক্ত করতে LRO এর লুনার এক্সপ্লোরেশন নিউট্রন ডিটেক্টর (LEND) যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। নিউট্রন উচ্চ-শক্তির গ্যালাকটিক মহাজাগতিক রশ্মি দ্বারা তৈরি হয়। বিস্ফোরণকারী তারা, চাঁদের রেগোলিথ পরমাণুগুলো ভেঙে নিউট্রন নামক সাবঅ্যাটমিক কণাগুলো ছড়িয়ে দেয়। নিউট্রন প্রায় ৩.৩-ফুট গভীরতা থেকে উৎপন্ন হতে পারে, রেগোলিথের মধ্যে অন্যান্য পরমাণুর সাথে ঢুকে যেতে পারে, আবার কিছু মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু হাইড্রোজেন ও নিউট্রনের সমান ভর, তাই হাইড্রোজেনের সাথে সংঘর্ষের ফলে নিউট্রন সবচেয়ে বেশি শক্তি হারায়। সুতরাং, যেখানে হাইড্রোজেন রেগোলিথে উপস্থিত থাকে, সেখানে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব, মাঝারি-শক্তি নিউট্রনের পরিমাণ হ্রাস করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 1 =