আর্কটিক মহাসাগরের গলে যাওয়া বরফ জমানোর প্রয়াস

আর্কটিক মহাসাগরের গলে যাওয়া বরফ জমানোর প্রয়াস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ অক্টোবর, ২০২৪

 

প্রতি দশকে আর্কটিক মহাসাগরের প্রায় ১৩% বরফ হারিয়ে যাচ্ছে। এই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের হার এত বেশি, বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কোনো রকম ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০ এর গ্রীষ্ম এই অঞ্চলে বরফমুক্ত হবে। আর বিশ্বব্যাপী এর পরিণতি হবে বিধ্বংসী। বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের বরফকে আবার জমাতে নতুন প্রযুক্তি অনুসন্ধান করছেন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের বক্তব্য অনুসারে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য সাম্প্রতিক কয়েক দশকে আর্কটিক সামুদ্রিক বরফের স্তর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ১৯৮০ এর দশক থেকে আর্কটিকের সবচেয়ে প্রাচীন পুরু বরফের স্তর ৯৫% হ্রাস পেয়েছে।বিজ্ঞানীদের মতে যদি “গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন দ্রুত হ্রাস করা যায়” তবুও, আর্কটিক পরবর্তী দশকের মধ্যে গ্রীষ্মে বরফ মুক্ত থাকবে। গত বছর প্রকাশিত গবেষণা পরামর্শ দেয় এখানে ৯০% বরফ গলে গেছে। আর এর জন্য মূলত দায়ী মানব-সৃষ্ট বিশ্ব উষ্ণায়ণ। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে বিশ্বকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং গ্রীষ্মে তীব্র তাপ এবং শীতে মারাত্মক ঠান্ডা এই অস্বাভাবিক প্রভাবের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এর সাথে দুঃখজনকভাবে মানুষের কারণে বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থলের ক্ষতি হচ্ছে।
কার্বন নির্গমন কমাতে ভবিষ্যতে বিশ্ব জুড়ে নানা প্রয়াস নিতে হবে। আর এর মধ্যে আপাতত তারা এই প্রভাব আটকানোর জন্য কিছু পন্থা বাতলেছেন। যেমন আর্কটিকের কিছু অংশে পাতলা কাচের টুকরো ছড়িয়ে দিলে পৃষ্ঠতলের প্রতিফলন বাড়বে আর তাতে বেশি বরফ জমা হবে। আর এতে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হওয়া শুরু হবে। অন্য এক পন্থার কথা উঠে এসেছে, যেখানে বরফের নীচে যাতে সমুদ্রের উষ্ণ জল স্পর্শ না করতে পারে, আর বরফ যাতে না গলে যায় তার জন্য ফ্রি ফ্লোটিং সমুদ্রের দেওয়ালের কথা ভাবা হয়েছে। ঠাণ্ডার জন্য আগ্নেয়গিরির অনুকরণে কিছু করার কথা ভাবা হয়েছে। তবে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ক্যালসিয়াম কার্বনেট ছড়িয়ে পড়লে সৌর বিকিরণ আটকে পড়বে যাতে ওজোন স্তরের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পন্থা উঠে এসেছে, বরফের ওপরে পাম্পের সাহায্যে সমুদ্রের জল ছড়িয়ে দেওয়া, যা শীতকালে জমে যাবে আর গ্রীষ্মে দীর্ঘস্থায়ী হবে। রিয়েল আইস এবং আর্কটিক রিফ্লেকশনস, নামে দুই উদ্যোগের বিজ্ঞানীরা এই সিস্টেম পরীক্ষা করছেন। এর জন্য পাতলা বরফের সন্ধানে একটা ডুবো ড্রোন পাঠানো হবে আর বরফের শীর্ষে গর্ত করে বরফের ওপরে সমুদ্রের জল পাঠানো হবে। অতিরিক্ত জল প্রাকৃতিক হিমায়িত প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে প্রায় এক মিটার পুরু বরফ তৈরি করবে আর তা উষ্ণ তাপমাত্রায় আরও টেকসই হবে। এবছর টেস্টিং-এ প্রথম পুনর্নবীকরণ পদ্ধতিতে হাইড্রোজেনের সাহায্যে পাম্প চালানো হচ্ছে। ডেলফ্ট ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক হায়ো হেন্ড্রিকসে বলেছেন, বরফ জমানো এই সমস্যার কোনো “সমাধান” নয়। এটা নিছক একটা “স্টিকিং প্লাস্টার” যা খুব ছোটো পরিসরে ব্যবহার করা যেতে পারে।