ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথালমোলজিতে প্রকাশিত এক বিস্তৃত বিশ্লেষণ অনুসারে বিশ্বব্যাপী প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা মায়োপিয়ায় আক্রান্ত। তাদের দূরের জিনিস দেখার ক্ষেত্রে অসুবিধা রয়েছে। গবেষণায় এও জানিয়েছে ২০৫০-এর মধ্যে এই বয়সী ৭৪০ মিলিয়ন বাচ্চারা মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হবে। নিকট দৃষ্টি বা মায়োপিয়া, সাধারণত শৈশবকালে শুরু হয় এবং বয়সের সাথে আরও খারাপ হতে থাকে। বর্তমানে এই রোগটি একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। গবেষকরা ২০৫০ সাল অবধি ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু ও কিশোর কিশোরীদের মধ্যে মায়োপিয়ার প্রাদুর্ভাব অনুমান করার চেষ্টা করেছেন। এই গবেষণায় ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত সমস্ত প্রাসঙ্গিক গবেষণা এবং সরকারী প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা ২৭৬টি গবেষণায়, এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, ওশেনিয়া, উত্তর এবং ল্যাটিন আমেরিকার ৫০টি দেশ থেকে ৫৪১০৯৪৫ জন শিশু এবং কিশোরকিশোরীদের নিয়ে করেছেন যেখানে ১৯৬৯০৯০ জন মায়োপিয়ায় আক্রান্ত। তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে ১৯৯০ এবং ২০২৩ সালের মধ্যে মায়োপিয়ার সামগ্রিক প্রকোপ তিনগুণেরও বেশি। ১৯৯০-২০০০ সালে রোগের প্রকোপ ২৪% থেকে ২০০১-২০১০ সালে ২৫% হয়েছে, তারপরে ২০১১-২০১৯ সালে তা বেড়ে ৩০% এবং ২০২০-২০২৩ সালে তা ৩৬% হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ৩ জন বাচ্চার মধ্যে ১ জন মায়োপিয়ায় আক্রান্ত। ২০২০-২০২৩ সালের মধ্যে কিশোরকিশোরীদের মধ্যে এর প্রবণতা প্রায় ৫৪% যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ের দেশে এই রোগের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জাপানে সর্বাধিক এবং প্যারাগুয়েতে সর্বনিম্ন ছিল। পূর্ব এশিয়ায় মায়োপিয়া রোগের প্রকোপ বেশি প্রায় ৩৫% আবার শহরাঞ্চলের এই রোগ বেশি দেখা যায়। ৪৭% কিশোরকিশোরীরা এই রোগে আক্রান্ত। এটি ছেলে এবং যুবকদের তুলনায় মেয়ে এবং যুবতী মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় বলে মনে করেন গবেষকরা। এবং ৬-১২ বছর বয়সীদের তুলনায় ১৩-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। মেয়েদের মধ্যে মায়োপিয়ার প্রকোপ বেশি লক্ষ করা গেছে কারণ মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় দ্রুত বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায় এবং বাইরে তারা কম সময় ব্যয় করে বরং ঘনিষ্ঠ পরিসরের বেশি সময় কাটায়, খেলাধূলা কম করে এবং তাদের মোবাইল দেখার প্রবণতাও বেশি। গবেষকরা তাদের অনুসন্ধানের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেছেন, তবে এই সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বৃহৎ সংখ্যক অংশগ্রহণকারী অন্তর্ভুক্ত করায়, মায়োপিয়ার বিস্তার সম্পর্কে গবেষকদের অনুমান সুনির্দিষ্ট সংখ্যার কাছাকাছি বলে বিবেচিত হয়। তাই এটা স্বীকার করতেই হবে যে ভবিষ্যতে মায়োপিয়া সারা বিশ্বে ভীষণ আকার ধারণ করতে চলেছে।