পৃথিবীতে শীতলতা আনতে বাতাসে হীরে ছড়ানো

পৃথিবীতে শীতলতা আনতে বাতাসে হীরে ছড়ানো

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ অক্টোবর, ২০২৪

পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে বাতাসে হীরের কুচি ছড়ানোর কথা বলছেন গবেষকরা। গ্লোবাল কুলিং অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পৃথিবীর বর্ধিত তাপমাত্রা হ্রাস। এ নিয়ে নানা পরীক্ষামূলক গবেষণার মধ্যে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক অ্যারোসল ইনজেকশন পদ্ধতি বহুদিন ধরেই আলোচিত। এতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আগ্নেয়গিরির ছাই বা সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি ছড়িয়ে দিয়ে তার তাপমাত্রা কমানোর কথা বলা হয়। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখের জলবায়ু বিজ্ঞানী স্যান্ড্রো ভ্যাটিওনির নেতৃত্বে গবেষকরা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক অ্যারোসল ইনজেকশন পদ্ধতিতে ব্যবহারের জন্য যে উপাদানের কথা বলেছেন তা হল বহুচর্চিত মূল্যবান হীরে। তারা জানিয়েছেন কয়েকশ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের হীরের ন্যানোপার্টিকেল এই ম্যাজিক ঘটিয়ে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে।
আগ্নেয়গিরিতে পাওয়া সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস বায়ুমণ্ডলে পাঠানো সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করা হত। কিন্তু এর নানা পার্শ্ববর্তী প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওজোন স্তরের ক্ষতি, অ্যাসিড বৃষ্টি, স্ট্র্যাটোস্ফেরিক উষ্ণায়ণ হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যেতে পারে। ভ্যাটিওনি জানাচ্ছেন, সালফার কণার ভৌত ধর্ম তাদের প্রতিফলক বানানোর অন্তরায়। সাত ধরনের অ্যারোসলের রাসায়নিক ধর্ম, নড়াচড়া, তাপীয় গতিবিদ্যা থেকে অ্যারোসলগুলোর তাপ শোষণ ক্ষমতা, প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা, প্রতিফলনের ক্ষমতা দেখা হয়েছে। গবেষকদের মতে অ্যারোসল যদি শীঘ্র জমাট বেঁধে যায়, তাহলে তা সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করতে পারবে না। এতে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার গরম হয়ে উঠবে যাতে বায়ুর স্রোতে পরিবর্তন আসবে ও বায়ু আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারবেনা। দুধরনের টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড,অ্যালুমিনা, ক্যালসাইট, হীরা, সিলিকন কার্বাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইড নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে হীরা সবচেয়ে ভালোভাবে কাজটা করতে পারছে। এটা জমাট বাঁধছেনা, বাতাসে ভেসে থাকছে, কোনো বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করছেনা যেমন সালফার ডাইঅক্সাইড থেকে অ্যাসিড বৃষ্টি হতে পারে। এই সাতটা পদার্থের মধ্যে রুটাইল নামে টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইডের প্রভাবে কোনো উষ্ণতা হ্রাস হচ্ছে না।
সালফার ডাইঅক্সাইডের সবচেয়ে সুবিধা হল এটার তুলনায় হীরে ২০০০গুণ বেশি খরচসাপেক্ষ। তবে পরীক্ষাগারের বাইরে কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে এই গাণিতিক সূত্র বাস্তব জগতে কতটা ফলপ্রসূ তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা কল্পনা রয়েছে। তবে জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানোর জন্য এটাই সবচেয়ে সহজ পন্থা নয়। এর তুলনায় অনেক সস্তা বিকল্প পদ্ধতি হল জীবাশ্ম-জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করা। এই গবেষণা জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারে প্রকাশিত হয়েছে।