প্রতি এক সেকেন্ডে আমাদের শরীরে দশ লাখ কোশ মারা যায়। তাহলে এত বর্জ্য যায় কোথায়? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রকফেলার ইউনিভার্সিটির গবেষণায় কোশের নরখাদকতার কথা বলা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, স্তন্যপায়ী শরীরের মৃত স্টেম সেল তাদের প্রতিবেশী কোশেদের খাদ্যে পরিণত হয়। এই কোশগুলো মৃত আর জীবিত কোশের গন্ধের সাথে পরিচিত। জীবন্ত স্টেম সেলগুলো দুটো সংবেদনশীল রিসেপ্টরের মাধ্যমে সদ্য তৈরি মৃত কোশের এক ঝলক গন্ধ পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রকফেলার ইউনিভার্সিটির সেলুলার বায়োলজিস্ট ক্যাথরিন স্টুয়ার্ট ব্যাখ্যা করেন, প্রত্যেক রিসেপ্টর যখন সংকেত গ্রহণ করে তখনই মৃত কোশ সাফাই শুরু হয়। যদি তাদের মধ্যে একটা রিসেপ্টর অদৃশ্য হয়ে যায়, তবে এই প্রক্রিয়া কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
ইঁদুর নিয়ে পরীক্ষায়, স্টুয়ার্ট এবং তার সহকর্মীরা দেখিয়েছেন যে যখন হেয়ার ফলিকল স্টেম সেল (HFSCs) মারা যায়, দ্রুত তাদের প্রতিবেশী কোশ তাদের গিলে খেয়ে ফেলে। ম্যাক্রোফেজের মতো ইমিউন কোশ একই কাজ করতে পারে, কিন্তু তাদের কাজ শুরুর আগেই প্রতিবেশী স্টেম কোশ মৃত কোশগুলো খেয়ে নেয়। প্রদাহ বন্ধ করে, গবেষকদের ধারণা হয়েছে এইচএফএসসি একে অপরকে একটা অতি সক্রিয় প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রক্ষা করছে। যখন এইচএফএসসি একে অপরকে খেতে অক্ষম হয়, তখন তাদের মৃতদেহ স্টেম সেল পুলের দীর্ঘমেয়াদী রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত করে। একটা এইচএফএসসি অন্য একটা কোশ খেতে পারে, কোনো সময় এটা ছটা মৃত কোশও খেতে সক্ষম।
মৃত কোশ খেয়ে শক্তির জন্য জ্বালানী পুনর্ব্যবহার করার এটা একটা উপায় হতে পারে বলে সেলুলার বায়োলজিস্ট ইলেইন ফুচস ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু মৃত কোশের ধ্বংসাবশেষ সাফ হওয়ার সাথে সাথে, স্টেম সেল পুল বজায় রাখার জন্য দ্রুত স্টেম সেল তাদের কাজে ফিরে গিয়ে শরীরের লোম তৈরি করে। এই পুরো প্রক্রিয়া এইচএফএসসি-তে যে দুটো রিসেপ্টরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাতে রিসেপ্টর দুটো ‘অন’ ও ‘অফ’ সুইচের মতো কাজ করে। একটা রিসেপ্টর মৃত প্রতিবেশী কোশের থেকে নিঃসৃত লিপিড সংকেতে সাড়া দেয়। অন্যটা সুস্থ কোশ থেকে নিঃসৃত বৃদ্ধি ঘটানোর জন্য দায়ী রেটনোইক অ্যাসিডে সাড়া দেয়। একটা মৃত কোশ থেকে লিপিড সংকেতের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়, আর যখন কোনো মৃত কোশ থাকে না এই লিপিড সংকেত অদৃশ্য হয়ে যায়, আর সুস্থ কোশ থেকে রেটনোয়িক অ্যাসিড সিগন্যাল আসতে থাকে। হেয়ায়র ফলিকল স্টেম সেলের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীর অন্যান্য কলাতেও এই প্রক্রিয়া দেখা যায় বলে গবেষকরা মনে করছেন। যা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। বর্তমান গবেষণা নেচার পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছে।