প্রকৃতি সমস্ত প্রাণীকেই নিজেকে রক্ষার জন্য নানা আশ্চর্য কৌশল দিয়েছে। এরকম এক প্রাণী হল গ্রেটার শর্ট-হর্নড টিকটিকি। উত্তর ও মধ্য আমেরিকায় এই টিকটিকির দেখা মেলে। কাঁটা দিয়ে ঢাকা পিঠ, থ্যাবড়া, চ্যাপ্টা আকৃতির এই টিকটিকিগুলোর মুখে ছোটো নাকের মতো অংশ থাকে, আর ছোটো ছোটো পা দেখা যায়। এই টিকটিকি প্রায় ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। এদের সরীসৃপের চেয়ে উভচর প্রাণীর মতো দেখায়, তাই এদের ডাকনাম “হর্নি টোডস”। এই টিকটিকিগুলো তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত। ভয় পেলে, বিপদের সময় এরা এদের চোখ দিয়ে ৫ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত রক্তের স্রোত বের করে শিকারীর দিকে ছুঁড়ে দেয়। এটা করার জন্য এরা মাথার রক্ত প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করে, এতে রক্তচাপ বেড়ে চোখের চারপাশে ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলো ফেটে যায়। এরা শিকারীদের বিভ্রান্ত করতে এদের ওপর গুলির মত রক্তস্রোত ছুঁড়ে দেয়। এতে শিকারীরা প্রাণীরা ভয় পেয়ে পালায়। মোটামুটি আটটা প্রজাতির শিংযুক্ত টিকটিকি এই কৌশল ব্যবহার করে বলে মনে হয়। এই কৌশল অটোহেমোরেজিং নামে পরিচিত। এই টিকটিকি প্রতিরক্ষার এই কৌশলে তাদের মোট রক্ত সরবরাহের এক তৃতীয়াংশ নির্গত করে দিতে পারে। কুকুর (ক্যানিস ফ্যামিলিয়ারিস), কোয়োটস (ক্যানিস ল্যাট্রান্স), শিয়াল (ভালপেস) এর মতো মাংশাসী প্রাণী তাড়াতে এরা রক্ত ছোঁড়ে। প্রাণীগুলো এই রক্তস্রোত থেকে মুক্তি পেতে তাদের মাথা নাড়তে থাকে। টিকটিকিটা এই আচরণের সাথে পরিচিত বলে মনে হয়। এরা অন্যান্য শিকারীদের তুলনায় কুকুরে ওপর এই কৌশল বেশি ব্যবহার করে।
এরা পোকামাকড়, পিঁপড়ে খায়। এদের রক্ত বিষাক্ত না হলেও, এদের ছোঁড়া রক্তে বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যায়, যা ভেনোমাস হার্ভেস্টার অ্যান্ট নামে পিঁপড়ে থেকে আসে বলে মনে হয়। কারণ এই টিকটিকির খাদ্য এই পিঁপড়েরা। এই পিঁপড়ের বিষ এদের কোনো ক্ষতি করতে পারেনা, যেহেতু এদের রক্তের প্লাসমায় এক ধরনের রাসায়নিক উপস্থিত থাকে যা পিঁপড়ের বিষকে প্রশমিত করে। পোকা শিকারের সময় এরা প্রচুর মিউকাস নিঃসৃত করে, যাতে পোকামাকড় নড়তে পারেনা, আর খাওয়ার সময় টিকটিকিকেও এই বিষের সংস্পর্শে আসেনা। শুধু যে রক্ত ছুঁড়ে এরা নিজেদের রক্ষা করে তা নয়। এদের চামড়া, চ্যাপ্টা দেহ, ছদ্মবেশ ধারণ করতে সাহায্য করে। এদের মাথায় দুটো বড়ো ফলার মতো স্পাইক থাকে আর শরীর ধারালো কাঁটায় ঢাকা। যদি কোনো শিকারী এদের কামড়ানোর চেষ্টা করে, তবে টিকটিকি তাদের মাথা নিচু করে শিকারীর মুখের কাছে শিং নাড়াতে থাকে। তার সাথে আক্রমণ করলে এরা এদের নিজেদের দেহ দুগুণ ফুলিয়ে তোলে। এতে শিকারীদের গলায় এই টিকটিকিগুলো আটকে যায়, এদের গিলে ফেলা যায়না।