গত শতাব্দীর এক রোগ নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানা ভাবনা চিন্তা করছেন। এই রোগ মহামারীর বেশে এসে মানুষকে বেশ বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল তারপর একদিন তা উধাও হয়ে গেল। যার চিহ্ন এখন আর মেলে না। কী সেই রোগ? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ স্লিপি সিকনেস বা এনকেফেলাইটিস লেথার্জিকা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু বিগত শতাব্দীতে এই রোগ একদম অদৃশ্য হয়ে সবাইকে রহস্যে রেখে গেল। কিন্তু এই রোগ নিয়ে বিজ্ঞানীরা কেন এত গবেষণা চালাচ্ছেন? তার কারণ স্নায়ুঘটিত এই রোগের পেছনে কী কারণ কাজ করেছিল, তা না জানলে চিকিৎসা বিজ্ঞান ভবিষ্যতে এ ধরনের মহামারীর জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবে না। ১৯১৭ সালে ভিয়েনার একজন নিউরোলজিস্ট এই রোগ প্রথম বর্ণনা করেন। প্রাথমিকভাবে এই রোগে ফ্লুয়ের মতো লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু তার পরের কয়েক সপ্তাহ রোগীদের মধ্যে কেউ কেউ বিন্দুমাত্র ঘুমোতে পারেননা। আবার কিছু রোগী এত ঘুমোন যে খাওয়ার সময় মাত্র কয়েক মিনিট তারা জেগে থাকেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এই অবস্থায় অর্ধেক ব্যক্তি মারা যান। যারা বেঁচে থাকেন, এমনকি কাজেও যোগ দেন, তারা দেখেন তাদের শরীর শক্ত হয়ে আসছে, হাঁটা চলা করতে অসুবিধা হচ্ছে, চোখ একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে আটকে যাচ্ছে, আর নাড়ানো যাচ্ছে না। এই অবস্থা বাড়তে থাকে, তারা স্থবির হয়ে যান, নড়া চড়া করতে পারেন না, কথা বলতেও পারেন না। কেউ কেউ একটানা অস্পষ্টভাবে গোঙাতে থাকেন। তাদের মুড, ব্যক্তিত্ব পালটে যায়।
এর উৎস খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা মনে করেছেন, এটা অন্য কোনো রোগের সংক্রমণ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এই সময়ে স্প্যানিশ ফ্লু দেখা গিয়েছিল। তা থেকে এটার উদ্ভব হয়েছে কিনা দেখতে গিয়ে দেখা গেছে এনকেফেলাইটিস লেথার্জিকার প্রথম উদাহরণ স্প্যানিশ ফ্লুয়ের আগে দেখা গেছে। রোগীদের মস্তিষ্কে কোনো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের চিহ্নও পাওয়া যায়নি। ৬০০ রোগীর ইতিহাস ঘেঁটে এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আগে তাদের ফ্লুয়ের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই রোগের সূত্রপাত হওয়ায় কোনো রাসায়নিক থেকে এর আবির্ভাব কিনা তাও দেখা হয়েছিল। সেখানেও কোনো সূত্র মেলেনি। এনকেফেলাইটিস লেথার্জিকা-র উৎস হিসেবে বর্তমানে অটোইমিউন এনকেফেলাইটিসের কথা ভাবা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শরীরে ফ্লু বা অন্য কোনো রোগ সংক্রমণ ঘটে। তার মোকাবিলা করার জন্য শরীরের প্রতিরোধ শক্তি সজাগ হয়ে ওঠে। আর শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেই নিজের শত্রুতে পরিণত হয়। যার থেকে সে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।