ওয়ান আর্থ জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় জানা যাচ্ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, মানব স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা একে অপরের সাথে সংযুক্ত। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায় যে সামুদ্রিক সুরক্ষিত অঞ্চলগুলো পৃথিবী ও তার বসবাকারী মানুষ উভয়ের জন্যই ভালো। সমুদ্রের এই অঞ্চলগুলো সংরক্ষণের জন্য সরকার আইনত স্বীকৃতি দিয়েছে। সংরক্ষিত এলাকার ভিতরে এবং চারপাশে, মানুষের কার্যকলাপের উপর বিধিনিষেধও জারি করেছে। সরকার যদি সমুদ্রের কোনো এলাকাকে সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করে তবে সাধারণত সেখানে বসবাস, মাছ ধরা, সমুদ্র সৈকত রিসোর্ট তৈরি করা, মাছ চাষ করা, তেলের জন্য গর্ত করা- সবই বারণ থাকে। নিয়মগুলো জায়গার ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়, তবে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল যতটা সম্ভব মানুষের কার্যকলাপকে সীমিত করে প্রকৃতির বিকাশ ঘটানো। জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য পরিকল্পনার “৩০×৩০” লক্ষ্য অনুমোদন করেছে যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৩০% ভূমি এবং মহাসাগর রক্ষা করা। সমুদ্র সুরক্ষা প্রসারিত করার পরিকল্পনাও এর অন্তর্গত। গবেষকদের মতে এটি কীভাবে মানুষের পাশাপাশি প্রকৃতিকে প্রভাবিত করবে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণাটি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার, হার্ভার্ড ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ এবং ডিউক ইউনিভার্সিটির সামুদ্রিক গবেষণাগার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। সারা বিশ্বে যে ২৩৪টি সামুদ্রিক সুরক্ষিত অঞ্চল তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, তার মধ্যে ৬০%-এরও বেশি প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং মানব কল্যাণ উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি দেখিয়েছে। গবেষণাপত্রটি আরও জানিয়েছে যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকায় বিনিয়োগ হলে, সেই এলাকায় বসবাসকারী মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবিকার উন্নতি ঘটে। মাছ এবং অন্যান্য জলজ খাবার যেমন শেলফিশ এবং সামুদ্রিক শৈবালের বর্ধিত উৎপাদনের ফলে সকলের উপকার হয়। মৎস্যজীবিদের আয় বৃদ্ধি পায় এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ জলজ খাবার মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে। আমাদের মহাদেশ এবং দ্বীপগুলো- সমুদ্র, হ্রদ, নদী দ্বারা বেষ্টিত এবং প্লাবনভূমিতে ভিটামিন, খনিজ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ভোজ্য গাছপালা এবং প্রাণী অনেক পরিমাণেই পাওয়া যায়। জলজ খাবারের এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট আমাদের শরীর খুব সহজে শোষণ করতে পারে। এই সব জলজ ফসল যদি সংগ্রহ করা হয় তবে তা অপুষ্টিতে আক্রান্ত মানুষদের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে অপুষ্টি প্রতিরোধ করা যাবে। বর্তমানে সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকাগুলো সামুদ্রিক মাছ ধরা থেকে ছয়টি মূল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের বৈশ্বিক সরবরাহের ১৪% প্রদান করে। এটি বিশ্বের সমুদ্রের মাত্র ৮% রক্ষা করে অর্জন করা হয়। মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, জীবিকা নির্বাহের জন্য মাছ ধরা বা পর্যটন থেকে আরও আয় হয় এবং বসবাসকারী মানুষ আরও বেশি খাবার পায়। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ফলে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
তবে সভ্যতার নানা কর্মকাণ্ডে বাতাসে যে পরিমাণে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস মিশছে, তার এক-তৃতীয়াংশই মহাসাগরগুলো শুষে নিচ্ছে। তার ফলে, মহাসাগরের জল আরও বেশি পরিমাণে লবণাক্ত হয়ে উঠছে। যার পরিণতিতে এক-চতুর্থাংশ সামুদ্রিক প্রাণীর বাসস্থান যেখানে সাগর, মহাসাগরের সেই প্রবাল প্রাচীরগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির মাছের মৃত্যু হচ্ছে। সুতরাং মানুষের কার্যকলাপে হ্রাস টানতে হবে। তবেই রক্ষা পাবে সমুদ্র, বাঁচবে প্রাণীকুল।