ঠান্ডা লেগে মুখের ঘা থেকে স্নায়ু রোগের সম্ভাবনা

ঠান্ডা লেগে মুখের ঘা থেকে স্নায়ু রোগের সম্ভাবনা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ নভেম্বর, ২০২৪

কোল্ড সোর, ঠান্ডা লেগে মুখে ঘা, বা চলতি কথায় জ্বরঠোসা নামে পরিচিত। এর জন্য দায়ী হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস টাইপ 1 (HSV-1)। গবেষণা বলছে, এটা মস্তিষ্ক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকেও সংক্রামিত করতে পারে। কীভাবে ভাইরাল আক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে তার ওপর গবেষণায় আলোকপাত করা হয়েছে। কলোরাডো ইউনিভার্সিটি এবং ফ্রান্সের বোরগোগন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে, ইঁদুরের মস্তিষ্কে HSV-1 ভাইরাসের প্রভাব অধ্যয়ন করা হয়েছিল। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের ম্যাপিং করে ভাইরাসের প্রভাবে কী ফলাফলগুলি হতে পারে তা দেখা হয়। HSV-1 দুটো পথের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে – ট্রাইজেমিনাল নার্ভ (মস্তিষ্ক থেকে মুখের বিভিন্ন অংশে সংকেত পাঠানো স্নায়ু) বা ঘ্রাণজনিত স্নায়ু। তবে এটা এখনও অস্পষ্ট যে কীভাবে সংক্রমণ মস্তিষ্কের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টি নিমেয়ার বলেছেন, সম্প্রতি এই সাধারণ ভাইরাস থেকে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ হচ্ছে যেমন অ্যালজাইমার্স রোগ; কিন্তু এতে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের আক্রমণের কোনো সুস্পষ্ট পথ এখনও খুঁজে বের করা যায়নি। কীভাবে HSV-1 মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে আর মস্তিষ্কের কোন অঞ্চল এতে আক্রান্ত হতে পারে তা শনাক্ত করতে পারলে, কীভাবে রোগের সূচনা হয় তা বোঝার চাবিকাঠি পাওয়া যাবে। গবেষকরা দেখেছেন, HSV-1 মস্তিষ্কের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে, মস্তিষ্কের স্টেম অঞ্চল – যা হৃদপিণ্ড এবং শ্বাসের গতির সমন্বয়, ঘুম, নড়াচড়ার জন্য দায়ী এবং হাইপোথ্যালামাস অংশ – যা ঘুম এবং মেজাজ থেকে শুরু করে ক্ষুধা এবং হরমোনের মাত্রা সবকিছু পরিচালনা করে। তবে, মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ যেমন হিপোক্যাম্পাস ও কর্টেক্স অঞ্চল আক্রান্ত হয়না। হিপোক্যাম্পাস স্মৃতিশক্তি, কোনো স্থানের দিকের সাথে যুক্ত, আর কর্টেক্স অঞ্চল স্মৃতি এবং মনোযোগের সাথে সংযুক্ত। অ্যালজাইমার্সে সাধারণত মানুষের এসব ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়।
গবেষকরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে মাইক্রোগ্লিয়ার কার্যকলাপের দিকে লক্ষ রেখে দেখেন, এটা HSV-1 এর সংস্পর্শে এসে স্ফীত হয়ে ওঠে। মাইক্রোগ্লিয়া হল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধক কোষ। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে এই ইমিউন কোষগুলোতে ভাইরাস চলে যাওয়ার পরেও প্রদাহ থাকে। গুরুতর ক্ষেত্রে, HSV-1 এনকেফালাইটিস সৃষ্টি করতে পারে যেখানে প্রদাহ পুরো মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। যদিও গবেষকরা এক্ষেত্রে HSV-1 এনকেফালাইটিসের উপস্থিতিতে মস্তিষ্কে পূর্ণ এনকেফালাইটিস দেখেননি। তবুও এটা এই অঞ্চলের কাজকে প্রভাবিত করতে পারে। ক্রমাগত স্ফীত কোশগুলো দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের দিকে পরিচালিত করতে পারে, যা নানা স্নায়বিক এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ক্ষেত্রে ট্রিগার হিসেবে কাজ করে৷ গবেষণাটি জার্নাল অফ ভাইরোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।