সৌরজগতের সবচেয়ে বড়ো গ্রহ বৃহস্পতির ভর সৌরজগতের বাকি ৭ টা গ্রহের মিলিত ভরের আড়াই গুণ। কিন্তু এই গ্রহে কোনো কঠিন বস্তু নেই, শুধুই গ্যাস। এতে কোনো মহাকাশযান নামতে পারবেনা। নাসার রোবোটিক প্রোব জুনো এই অদ্ভুত গ্রহকে নবম বছর প্রদক্ষিণ শুরু করেছে। বৃহস্পতি, সূর্যের পঞ্চম গ্রহ, যা মঙ্গল ও শনির গ্রহের মধ্যে অবস্থিত। এটা এত বড়ো যে এর মধ্যে ১০০০টা পৃথিবীর জায়গা হয়ে যাবে। সৌরজগতের চারটে অভ্যন্তরীণ গ্রহ – বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল, কঠিন, পাথুরে উপাদান দিয়ে তৈরি। কিন্তু বৃহস্পতিতে কোনো কঠিন বস্তু নেই, এটা গ্যাস দৈত্য যার গঠন সূর্যের মতো। এটা ঘুরন্ত, বন্য, ঝড়ো অশান্ত এক গ্যাসীয় বল। বৃহস্পতির কিছু জায়গায় প্রায় প্রতি ঘণ্টায় ৬৪০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে, যা পৃথিবীর প্রবলতম হারিকেনের প্রায় তিনগুণ।
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের শীর্ষে রয়েছে হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম গ্যাস, যত এই গ্রহের কাছে যাওয়া যাবে, ততই গ্যাসের চাপ বাড়বে। পৃথিবীতেও বায়ুমণ্ডল থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের যত কাছে যাওয়া যায়, তত চাপ বাড়ে। কিন্তু বৃহস্পতি গ্রহে এই চাপ প্রবল। গ্যাসের স্তরগুলো আমাদের বেশি করে নীচে ঠেলে দেবে, অনেকটা সমুদ্রের তলদেশের মতো অনুভূতি আসবে, কিন্তু জলের পরিবর্তে, আমরা তখন গ্যাস বেষ্টিত অবস্থায় থাকব। আর এর চাপ এত তীব্র যে আমাদের শরীর দুমড়ে মুচড়ে, পিষে ফেলবে। তা পেরিয়ে ১৬০০ কিলোমিটার নিচে গেলে গরম, ঘন গ্যাস অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করবে। গ্যাস তখন তরল হাইড্রোজেন আকারে পরিণত হবে। যাকে সৌরজগতের বৃহত্তম মহাসাগর হিসাবে ভাবা যেতে পারে, যদিও তা জলবিহীন এক মহাসাগর। প্রায় ৩২০০০ কিলোমিটার নিচে গেলে এই হাইড্রোজেন তরল প্রবাহিত ধাতুর মতো হয়ে যাবে। পৃথিবীতে অনেক কষ্টে, বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে এটা বানিয়েছেন। এই তরল ধাতব হাইড্রোজেনের পরমাণুগুলো এত শক্তভাবে চেপে থাকে যে এর ইলেক্ট্রনগুলো ঘুরে বেড়াতে পারে। বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির কেন্দ্রের উপাদানের সঠিক প্রকৃতি নিয়ে বিতর্ক করছেন। বেশিরভাগের মতে এটা পাথরের মতো শক্ত নয়, বরং তরল ও কঠিনের গরম, ঘন মিশ্রণ। বৃহস্পতির কেন্দ্রে চাপটি এতটাই বিশাল যেন ১০ কোটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আমাদের ওপর চাপ দেবে। কিন্তু চাপ একমাত্র সমস্যা নয়। বৃহস্পতির কেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে মহাকাশযান চরম তাপে গলে যাবে, এখানে তাপ ২০০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সূর্যের পৃষ্ঠের চেয়ে তিনগুণ বেশি গরম। তবে বৃহস্পতি না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকত না। এই গ্রহের প্রবল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য ধূমকেতু, উল্কার গতি পালটে যায়। তা নাহলে মহাকর্ষীয় বস্তুর সাথে আভ্যন্তরীণ গ্রহগুলোর ধাক্কা লেগে প্রাণ বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকত।