স্ত্রী রোগের মধ্যে অন্যতম এন্ডোমেট্রিওসিস। জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে যে এন্ডোমেট্রিওসিস কলা থাকে, সেগুলো যখন ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বাশয়ে দেখা যায়, তার থেকে তলপেটে দীর্ঘস্থায়ী তীব্র ব্যথা হয়। সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্যথা-সংবেদনশীল নিউরন ও রোগাক্রান্ত কলার মধ্যে ম্যাক্রোফেজ নামক ইমিউন কোশের যোগাযোগের ফলে এই ব্যথা সৃষ্টি হয়। বোস্টন চিলড্রেন’স হাসপাতালের প্রধান গবেষক এবং পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো ভিক্টর ফাট্টোরি বলেছেন, রোগীদের ব্যথা নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হল আইবুপ্রোফেনের মতো প্রচুর পরিমাণে নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ গ্রহণ। এই ওষুধগুলো ব্যথা কমালেও ব্যথার মূল কারণ সারায়না। এছাড়া, হরমোন থেরাপির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে এন্ডোমেট্রিওটিক টিস্যুর বৃদ্ধি কমিয়ে ব্যথা উপশম করতে পারে। কিন্তু এই উভয় চিকিত্সা পদ্ধতি, অনেক রোগীর ক্ষেত্রে অকার্যকর। এগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী আইবুপ্রোফেন ব্যবহার কিডনি এবং লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। হরমোন থেরাপি ঋতুচক্র ব্যাহত করতে পারে, এর থেকে খিটখিটে মেজাজ, ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। রোগীর এন্ডোমেট্রিওটিক কলা শল্য চিকিৎসায় বাদ দেওয়া যায়, কিন্তু এই পদ্ধতিও সবসময় সফল হয় না।
গবেষকরা রোগগ্রস্থ ইঁদুর থেকে সংগৃহীত এন্ডোমেট্রিওটিক কলা, সেইসাথে আটজন রোগী থেকেও নমুনা নিয়েছিলেন, যারা অস্ত্রোপচার করে এই কলা অপসারণ করেছিলেন। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে কলাতে ক্যালসিটোনিন জিন-সম্পর্কিত পেপটাইড নামে একটি রাসায়নিক বার্তাবাহক রয়েছে আর এটা কোশের সাথে আবদ্ধ করার জন্য যে রিসেপ্টর ব্যবহার করে, তা RAMP1 নামে পরিচিত। এই একই রাসায়নিক মাইগ্রেনের ব্যথার সময় নির্গত হয় আর এটাই মাইগ্রেনের ব্যথার কারণ বলে মনে করা হয়। এছাড়া গবেষকরা দেখেন,এই রাসায়নিক ইমিউন কোশ ম্যাক্রোফাজের সাথে কাজ করে এন্ডোমেট্রিওসিস বাড়ায়। তারা ফ্রেমানেজুমাব, গ্যালকানেজুমাব, রিমেজেপ্যান্ট এবং ইউব্রোজেপ্যান্ট নামক ওষুধগুলো এই রোগ সারাতে পরীক্ষা করেছেন, এগুলো মাইগ্রেনের চিকিত্সার জন্য ইতিমধ্যেই ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) দ্বারা অনুমোদিত। এই ওষুধগুলো এন্ডোমেট্রিওসিস রোগের ক্ষেত্রেও নিরাপদ ও কার্যকরী হবে বলে তারা জানিয়েছেন।