স্মৃতিশক্তি লোপ, ভাবনাচিন্তার অসুবিধা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা এইসব একাধিক সমস্যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ডিমেনশিয়া। সবচেয়ে বহুল ও দুরারোগ্য ডিমেনশিয়ার উদাহরণ হল অ্যালজাইমার্স। শুধু ভারতেই নয়, গোটা বিশ্ব জুড়েই বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগটি কার্যত গুপ্ত ঘাতকের মতো আসে। কিন্তু ডিমেনশিয়া ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করা খুব কঠিন বলে প্রমাণিত হচ্ছে, তাই চিকিৎসকেরা দেখার চেষ্টা করেছেন খাদ্যতালিকার কোন কোন উপাদান মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়ক। ইউকে বায়োব্যাঙ্কের ৫০,০০০-এরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সব ব্যক্তিরা একমুঠো বাদাম খান তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি কম হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে ৬০ বছরের বেশি প্রবীণ ব্যক্তিরা যারা বাদাম খান না, তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন ৩০ গ্রাম মতো বাদাম খান তাদের আসন্ন বছরগুলোতে ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি ১৬% হ্রাস পেয়েছে। লবণ ছাড়া বাদাম খাওয়া হলে, ডিমেনশিয়া রোধের ক্ষমতা ১৭% বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে বাদাম কাঁচা, শুকানো, ভাজা বা খোসা ছাড়ানো যে কোনো ধরনেরই হতে পারে। বিষয়টি গবেষকদের কাছে আশার আলো দেখালেও মনে রাখতে হবে অধ্যয়নের সুফল শুধুমাত্র তাদের মধ্যে দেখা গেছে যাদের স্থূলতা নেই, বা যাদের স্বাভাবিক পরিমাণে ঘুম হয় এবং যারা প্রতিদিন ধূমপান বা মদ্যপান করেন না। এর আগেও কিছু অধ্যয়নে দেখা গেছে বাদাম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ সমৃদ্ধ বাদাম আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি যোগায়, পুষ্টি দেয় ও প্রদাহ রোধ করে। তাই বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে বাদামের গুণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বারো সপ্তাহের একটি নিয়ন্ত্রিত ট্রায়ালে, গবেষকরা দেখেছেন প্রতিদিন একমুঠো চিনাবাদাম স্বাস্থ্যকর, মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তি এবং মৌখিক সাবলীলতা বাড়িয়ে তোলে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণা প্রমাণ করে ধূমপান, মদ্যপান নিয়ন্ত্রণ করলে ও প্রতিদিন শরীরচর্চা করলে, বা নিজেকে সামাজিকভাবে সক্রিয় রাখলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৪০%-র মতো প্রতিরোধ করা যেতে পারে বা বিলম্বিত করা যেতে পারে। গবেষকদের ধারণা ডিমেনশিয়া রোধে ডায়েট একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। পশ্চিমী খাবারদাবার যাতে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট, চিনি এবং লবণ থাকে, ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির কারণ বলে পূর্বের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। ৬০,০০০ ব্রিটেনবাসীদের উপর একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট বা শাকসবজি, ফল, হার্বস, বাদাম, বিনস, মটরশুটি বা দানা শস্য খেলে ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি ২৩% কমে যায়। তবে গবেষকদের মতে পর্যবেক্ষণমূলক এবং ক্লিনিকাল ট্রায়াল, উভয়ক্ষেত্রেই, ভবিষ্যতে প্রাপ্তবয়স্কদের ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের কৌশল হিসাবে বাদাম খাওয়ার কার্যকারিতা আরও বেশি করে মূল্যায়ন করা উচিত।