মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রবণতা

মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রবণতা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

এত ব্যাপকতা এত অধ্যয়নের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ক্যান্সার আজও রহস্যময়। তাই বিজ্ঞানীদের মনে এই রোগ নিয়ে প্রশ্নও অনেক বেশি। কেন অন্যদের তুলনায় কিছু প্রাণীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি? কেন ছোটো প্রাণীদের চেয়ে আকারে বড়ো প্রাণীদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে? বড়ো প্রাণীদের শরীরে কোশের সংখ্যা বেশি, এবং পরিসংখ্যানগতভাবে তাদের কোশে জেনেটিক মিউটেশন বা পরিব্যক্তির সম্ভাবনা বেশি যা পরবর্তী ক্ষেত্রে ক্যান্সারের দিকে চালিত হতে পারে তবুও কেন দেখা গেছে, তিমি এবং হাতির মতো কিছু বড়ো আকৃতির প্রাণীদের ক্যান্সারের প্রবণতা কম?
ইউসি সান্তা বারবারা নৃতত্ত্ববিদ অ্যামি বডি এবং তার সহযোগীরা এর উত্তর খোঁজার আশায় ক্যান্সার নিয়ে কাজ করেছেন। এক দশক-দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তারা উভচর, সরীসৃপ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী সহ মেরুদণ্ডী প্রাণীর ২৯২টি প্রজাতির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অধ্যয়ন করেছেন। এই অধ্যয়ন গবেষকদের ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করার কৌশল জানার সুযোগ দিয়েছে। জানতে সাহায্য করেছে ক্যান্সার হতে পারে এমন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম দেখা যায় এক ধরনের ডলফিন যার নাম পোর্পোইস এবং কালো পাওয়ালা পেঙ্গুইনের মধ্যে। আবার এই টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে নেউল বা বেজি জাতীয় প্রাণী- ফেরেটদের মধ্যে। বিজ্ঞানীদের মতে একটি জিনিস খুব স্পষ্ট যে সব প্রাণীই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এটি একটি বহুকোশী জীব হওয়ার সমস্যা। কেউ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত নয়। প্রকৃতপক্ষে বহুকোশী জীবনের উত্থান জটিলতার দ্বার উন্মুক্ত করে। বহুকোশী প্রাণীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের কোশ থাকে এবং তারা একে অপরের সাথে সংযুক্ত। এই সব কোশে যখন পরিব্যক্তি ঘটে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোশের বৃদ্ধি ঘটে তখনই সমস্যার সূচনা হয়। গবেষকরা দেখেন তুলনামূলকভাবে আকারে বড়ো প্রাণী, যাদের গর্ভাবস্থার সময় বেশি তাদের কম ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। গবেষকদের ধারণা যে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের গর্ভধারণের সময় বেশি থাকে তারা কোশের রক্ষণাবেক্ষণে আরও বেশি বিনিয়োগ করে কারণ তাদের বড়ো এবং দীর্ঘজীবী হতে হবে। তাই মিউটেশন এড়িয়ে চলে। তবে এই বৈশিষ্ট্য প্রাণীদের বিবর্তনের সময় তৈরি হয়। প্রাণীরা যখন স্বতন্ত্র প্রজাতিতে বিকশিত হয়েছে তখন তাদের পরিব্যক্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন হাতির ক্ষেত্রে একটি টিউমার প্রতিরোধকারী জিন P53-র ২০ টি প্রতিলিপি রয়েছে। আবার কিছু প্রাণীর কোশে পরিব্যক্তির হার অনেক কম তাই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও কম। বিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রতিটি প্রজাতি অনন্য এবং তাদের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার কৌশলও আলাদা তাই মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে একটি সাধারণ প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায় না।