রক্তই ভ্যাম্পায়ার বাদুড়দের শক্তির উৎস !

রক্তই ভ্যাম্পায়ার বাদুড়দের শক্তির উৎস !

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ নভেম্বর, ২০২৪

মানুষ কাজ করার শক্তি পায় মূলত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার থেকে, যথা ভাত, রুটি, আলু, ভুট্টা ইত্যাদি। ভ্যাম্পায়ার বাদুড় কিন্তু তাদের শক্তির জন্য নির্ভর করে রক্তের ওপর। বিজ্ঞানীরা এই ভ্যাম্পায়ার বাদুড়দের ছোটো ট্রেড মিলে চড়িয়ে তাদের শক্তির এই উৎস আবিষ্কার করেছেন।
মানুষ সহ বেশির ভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণী শারীরিক ক্রিয়াকলাপ চালানোর জন্য খাদ্য থেকে পাওয়া শর্করা ও চর্বির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার বাদুড় শুধু রক্ত খায়। রক্তে কার্বোহাইড্রেট আর চর্বি খুব কম থাকে কিন্তু প্রোটিন থাকে বেশি পরিমাণে । টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেনেথ ওয়েল্‌শ জানিয়েছেন, ভ্যাম্পায়ার বাদুড়রা আমাদের মতো শক্তির জন্য শর্করার ওপর নির্ভরশীল নয়। প্রশ্ন হল, তাহলে কি ভ্যাম্পায়ার বাদুড়রা কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে প্রোটিন আহার করে তা থেকেই বেশির ভাগ শক্তি আহরণ করে – যেমনটা করে রক্তচোষা কীটরা?

ভ্যাম্পায়ার বাদুড় তিন প্রজাতিরঃ সাধারণ ভ্যাম্পায়ার বাদুড়, লোমশ পা-ওয়ালা হেয়ারি লেগেড ভ্যাম্পায়ার বাদুড় ও শাদা পাখাওয়ালা হোয়াইট উইংড ভ্যাম্পায়ার বাদুড়। মেক্সিকো, ত্রিনিদাদ প্রমুখ দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলে এই বাদুড়দের দেখা মেলে। ২০-১০০টা করে বাদুড় এক একটা বসতি তৈরি করে থাকে। একমাত্র সাধারণ ভ্যাম্পায়ার বাদুড় প্রজাতিই দৌড়তে সক্ষম; অনেকটা গোরিলাদের কায়দায় তারা তাদের সামনের অঙ্গগুলোকে দমকে দমকে এগিয়ে নিয়ে যায়, যাতে চটপট শিকারের কাছে পৌঁছে যেতে পারে।
বায়োলজি লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁরা ২৪টা প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণ ভ্যাম্পায়ার বাদুড় ধরেছিলেন। বাদুড়গুলোকে ১৮ ঘণ্টা না-খাইয়ে রাখা হয়েছিল, যাতে শেষবার তারা যা খেয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে হজম হয়ে যায়। এরপর ভ্যাম্পায়ার বাদুড়দের দুটো অ্যামিনো অ্যাসিডে সমৃদ্ধ গরুর রক্ত খাওয়ানো হল – গ্লাইসিন আর লিউসিন। এই অ্যামিনো অ্যাসিড দুটোকে লেবেল করে দেওয়া হয়েছিল। তারপরে প্রতিটা বাদুড়কে ট্রেড মিল চেম্বারে চড়িয়ে বিভিন্ন গতিতে মিল চালিয়ে তাদের বিপাকীয় কার্যকলাপে অক্সিজেনঃ কার্বনডাইঅক্সাইড অনুপাত মাপা হল। অ্যামিনো অ্যসিডগুলোকে শক্তি আহরণের জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করার জন্য গবেষকরা অবলোহিত লেজারযুক্ত একটা বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। বাদুড়গুলোর নিশ্বাসের সঙ্গে যে-কার্বন ডাইঅক্সাইড বেরোবে তার মধ্যে কার্বনের কতকগুলো আইসোটোপ আছে কিনা তা ওই মেশিন থেকে জানা যাবে। পরীক্ষার ফল থেকে দেখা গেল, ট্রেডমিলের গতি যাই হোক না কেন, অক্সিজেনঃকার্বন ডাই অক্সাইড অনুপাত একই থাকে। তার মানে, ভ্যাম্পায়ার বাদুড়েরা তাদের শক্তি আহরণের মূল উৎস হিসেবে অ্যামিনো অ্যাসিডগুলোকেই ব্যবহার করে। আরও দেখা গেল, ভ্যাম্পায়ার বাদুড় রক্ত খাওয়ার মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ফ্রি অ্যামিনো অ্যাসিড শোষণ করে নেয়। অ্যামিনো অ্যাসিড ভেঙে শক্তি উৎপাদনের এই পদ্ধতি স্তন্যপায়ীদের মধ্যে বড়ো একটা দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু অমেরুদণ্ডী রক্তচোষা প্রাণী (যথা ৎসে-ৎসে মাছি কিংবা বিশেষ এক প্রজাতির স্ত্রী-মশা)এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। দেখা গেল ভ্যাম্পায়ার বাদুড়রাও তাদের দৌড়-ঝাঁপের শক্তি ওইভাবেই উৎপাদন করে।