রাগের বোঝা নিয়ন্ত্রণে

রাগের বোঝা নিয়ন্ত্রণে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

নানা রকম অনুভূতির মধ্যে রাগও একটি। ইদানীং ছোটো থেকে বড়ো সকলেরই রাগের পারদ চড়ছে। মাত্রা কম-বেশি হলেও আমরা বড়োরা এই রাগকে হয়তো সামলে রাখতে পারি। তবে শিশুদের মধ্যেও খুব অল্প বয়স থেকেই অকারণে রাগ করার প্রবণতা দেখা যায়। সন্তানের রাগ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন মা-বাবারা। কড়া হাতে সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেকসময় কিন্তু হিতে বিপরীত হচ্ছে। উত্তরোত্তর বাড়ছে সন্তানের রাগ। মুখে-মুখে তর্ক, কোনও কথা না শোনা, জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলা বা অবাধ্য কোনও আচরণও ক্রমশ রপ্ত করে ফেলছে খুদেরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুরা প্রায়শই ছোটোখাটো কারণে হতাশ হয়ে পড়ে, তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় কারণ তারা এখনও নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা অর্জন করে উঠতে পারেনি, তাদের সে দক্ষতা তৈরি হচ্ছে। এই অনুভূতি কীভাবে যথাযথভাবে প্রকাশ করা যায় শিশুদের তার উপায় বাতলে দিতে হবে। নাহলে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসবে, স্কুলে সমস্যা হবে, সম্পর্কের টানাপোড়েন ঘটবে। রাগ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বাচ্চাকে শেখানোর ক্ষেত্রে বাবামায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কীভাবে তারা তাদের রাগকে উৎপাদনশীলভাবে প্রক্রিয়া করতে পারবে সে বিষয়ে সহায়তা প্রদান করতে হবে অভিভাবকদের। তবে কিছু অভিভাবকদের হয়তো কৌশলগুলো নিজেদেরই শিখতে হবে।
সন্তানের রাগ বা হতাশা মোকাবিলা করতে বাবামায়েরা বিভিন্ন কৌশল সমর্থন করেছেন। ছবি আঁকা, দশ পর্যন্ত গোনা, গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, মনকে শান্ত করতে আনন্দের কোনো ঘটনা চিন্তা করা, ধ্যান বা মননশীলতা বা অন্য মানুষদের থেকে দূরে সরে যাওয়া। কিছু বাচ্চা আবার তাদের রাগের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমেও উপকৃত হয়, যেমন কাগজ ছিঁড়ে ফেলা বা স্ট্রেস বল নিয়ে খেলা। আবার কেউ কেউ চিৎকার করে রাগটা বের করে দিয়েই খুশি হয়। গবেষকদের মতে এমন কোন কৌশল নেই যা জাদুর মতো কাজ করবে। তাই বাবামায়ের উচিত বিভিন্ন তথ্য বা পরামর্শের সাহায্য নেওয়া। নিজেদের সন্তানের রাগ বা হতাশার মোকাবিলা করতে বাবা-মায়েরা পর্যাপ্ত ঘুম এবং ব্যায়ামের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন, রাগের কারণ শনাক্ত করে সেই কারণ এড়িয়ে যাওয়ার দিকেও নজর দিয়েছেন। সন্তানদের রাগ বা জেদকে বশে আনতে গেলে চিৎকার করে বা বকাঝকায় কাজ হবে না। সমস্যার উৎসকে খুঁজে বের করতে হবে। কারণ, প্রতিটি বাচ্চার মনস্তত্ত্ব আলাদা। তাদের প্রাথমিক চাহিদাও আলাদা। তাই দেখতে হবে কেন তারা রেগে যাচ্ছে। শিশুদের রাগ প্রায়শই ভয় বা হতাশার অনুভূতি থেকে উদ্ভূত হয় কিন্তু তা তাদের শান্তভাবে প্রকাশ করার দক্ষতা নেই। গবেষকরা বলেন রাগ একটি গৌণ আবেগ, অন্তর্নিহিত অনুভূতির প্রতিক্রিয়া। তাই এই অনুভূতি বুঝতে প্রাপ্তবয়স্কদের সহানুভূতি এবং ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন বাচ্চারা যদি নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তবে অভিভাবকদের উচিত তাদের প্রশংসা করা বা ইতিবাচক বার্তা দেওয়া।এতেও কিন্তু সে সচেতন হবে। রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখলে যে তার রিওয়ার্ড বাড়বে, সেটা সে বুঝবে। রেগে যাওয়া বা হতাশাগ্রস্ত হওয়ার জন্য বাচ্চাদের শাস্তি না দিয়ে তাদের হতাশা মোকাবিলার উপায় বের করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু এও দেখতে হবে তারা যেন কোনভাবেই নিজেদের বা অন্যদের আঘাত না করে বা আক্রমনাত্মক আচরণ না দেখায়। যদি দেখা যায়, সন্তানের রাগের কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই এবং সেই রাগ পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তার রাগ তীব্র, ঘন ঘন বা নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য হয়ে উঠেছে তখন এটা মানসিক অসুস্থতার কারণে হতে পারে। শিশুর সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − two =