একটা পরমাণুর পরিবর্তনেই পাখিদের রঙ বদলায়

একটা পরমাণুর পরিবর্তনেই পাখিদের রঙ বদলায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

 

নানা রঙা পাখির রঙের সমাহারে চোখ জুড়িয়ে যায়। ছোটো বদরি পাখিগুলোই দেখুন, আলাদা আলাদা কতরকমের রঙ খুঁজে পাবেন। বিভিন্ন পাখির নানা রঙিন প্রজাতির উদ্ভবের রহস্য কী? উজ্জ্বল লাল, কমলা এবং হলুদ পালকওয়ালা বা এইসব রঙের ঠোঁটওয়ালা পাখিরা তাদের রঙ তৈরি করতে ক্যারোটিনয়েড নামে রঞ্জকের গ্রুপ ব্যবহার করে। কিন্তু এরা সরাসরি ক্যারোটিনয়েড তৈরি করতে পারে না। যে গাছপালা তারা খায় সেই খাদ্য থেকে তারা রঞ্জকগুলো পায়। তোতাপাখিরা এই নিয়মের একব্যতিক্রম, এরা রঙিন রঞ্জক তৈরির জন্য সিটাকোফালভিন সংশ্লেষণ করে। এই বিষয়টা বিজ্ঞানীরা আগে জানলেও, পাখিরা কীভাবে রঙের তারতম্যের জন্য এগুলো ব্যবহার করে তার পিছনে জৈব রাসায়নিক এবং জেনেটিক ভিত্তি বিশেষ জানা ছিল না। তোতা এবং ফিঞ্চ সম্পর্কে সাম্প্রতিক দুটো পৃথক গবেষণায় এ বিষয়ে জানা গেছে। একটি গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ড্যানিয়েল হুপার, যেটি কারেন্ট বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছিল। সায়েন্সে প্রকাশিত অন্য গবেষণাটির নেতৃত্বে ছিলেন পর্তুগিজ জীববিজ্ঞানী রবার্তো আবোর।
আন্তর্জাতিক গবেষকরা এই দুটো গবেষণায় উন্নত জেনেটিক সিকোয়েন্সিং ব্যবহার করে জিনোমের কোন অঞ্চল তোতা ও ফিঞ্চের হলুদ বা লাল রঙের বৈচিত্র্য নির্ধারণ করে তা শনাক্ত করেছেন। আরবোরের গবেষণায় ডাস্কি লরি (Pseudeosfuscata) নামে নিউ গিনির স্থানীয় এক তোতা পাখির পালকে হলুদ, কমলা বা লাল রঙের পটি দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে হলুদ এবং লাল পালকের রঙের পরিবর্তনের সঙ্গে ALDH3A2 নামক উৎসেচক যুক্ত ছিল। এই উৎসেচক লাল তোতার রঞ্জককে হলুদে রূপান্তরিত করে। যখন পালক গজাতে থাকে তার মধ্যে যদি প্রচুর পরিমাণে উৎসেচক থাকে, তাহলে পালকের রঙ হলুদ হয়। আর উৎসেচক কম থাকলে, পালক লালরঙের হয়। দুধরনের পাখিতে আলাদা রঞ্জক দেখা যায়, কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, তাদের বিবর্তন একই উপায়ে হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই উৎসেচক অন্যান্য অনেক প্রজাতির তোতাপাখির রঙের বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।
উত্তর অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় এক প্রজাতির গাইয়ে পাখি হল ল্যাজঝোলা ফিঞ্চ (Poephila acuticauda)। এদের বিভিন্ন রঙের ঠোঁটওয়ালা দুটো সংকর উপপ্রজাতি রয়েছে, একটা হলুদ-ঠোঁটের অন্যটা লাল ঠোঁটের। হলুদ বা কমলা রঙের ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক পাখিরা পায় তাদের খাদ্য থেকে। রঞ্জকগুলো খাওয়ার পরে তাদের রাসায়নিক পরিবর্তন হলে তবেই পাখিদের শরীরে লাল রং আসবে। হুপারের গবেষণায় দেখা গেছে ল্যাজঝোলা ফিঞ্চের ঠোঁটের রঙ দুটো জিনের সাথে যুক্ত, CYP2J19 এবং TTC39B। একসাথে, এই দুটো জিন খাবারের হলুদ ক্যারোটিনয়েডকে লাল রঙে রূপান্তরিত করে। ফিঞ্চে, হলুদ রঙের ঠোঁটের পরিব্যাপ্তির সময় দেখা যায় এই জিনগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশে যেমন চোখের মধ্যে এই জিন সক্রিয় থাকে। অন্যান্য ফিঞ্চ প্রজাতির সাথে এই রঙের জিনের ডিএনএ কোড তুলনা করে, গবেষকরা দেখেছেন আধুনিক ল্যাজঝোলা ফিঞ্চের পূর্বপুরুষদের ঠোঁট ছিল লাল, কিন্তু পরিব্যপ্তির দরুন হলুদ ঠোঁট ধীরে ধীরে সাধারণ হয়ে উঠছে।