ভারতে পাখি, পতঙ্গের জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে

ভারতে পাখি, পতঙ্গের জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

 

বাস্তুতন্ত্রে প্রতিটা প্রাণীর উপস্থিতি অপরিহার্য। প্রথম শ্রেণির খাদক ছোটো ফড়িং-ই হোক বা শীর্ষ খাদক বাঘ দুজনেরই গুরুত্ব বাস্তুতন্ত্রে অপরিসীম। লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্ট ২০২৪ অনুসারে প্রকৃতি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। ৫০০০ মেরুদণ্ডী প্রাণীর ওপর সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ১৯৭০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৭৩% -এ এসে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ডের এই রিপোর্টে ভারতের জন্য একটা বিভাগ ধার্য করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে নানা পাখির সংখ্যা কমছে। ১৯৯২ থেকে ২০০২ সালে শকুন প্রজাতির সংখ্যা সবচেয়ে হ্রাস পেয়েছিল। তিন ধরনের শকুনের সংখ্যা ৯৮ শতাংশ থেকে ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। শকুনের জনসংখ্যা হ্রাসের জন্য দায়ী মূলত গবাদি পশুতে ডাইক্লোফেনাক, এসিক্লোফেনাক, কেটোপোরফেন এবং নাইমসুলাইডের মতো ওষুধের ব্যাপক ব্যবহার। কিছু এলাকায় গবাদি পশুর মৃতদেহে বিষ ও হাই টেনশান বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ায় তাদের মৃত্যু ঘটে। গত বছর ভারতে এসিক্লোফেনাক, কেটোপোরফেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু এখনও শকুনের জনসংখ্যায় কোনো বৃদ্ধি ঘটেনি।
বিগত ৫০ বছরে অন্যান্য দেশের সাথে ভারতেও পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সরকারি, বেসরকারি ১৩ টা সংগঠনের মিলিত তথ্য থেকে পাখির জনসংখ্যা হ্রাস উঠে এসেছে। জানা গেছে, খোলা বাস্তুতন্ত্র যেমন নদীর পাড়, সমুদ্রতট, মরুভূমি, শুষ্ক জমি, ঘাস জমি, মানুষের সৃষ্ট ফসলের জমি, পশু চারণ ভূমিতে পাখির সংখ্যা কমেছে।
পৃথিবীর নানা দেশে মথ, প্রজাপতি, মৌমাছির মতো নানা পরাগায়নকারী পতঙ্গের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বিগত দুদশকে পৃথিবীর ২২ টা দেশে ঘাসজমির প্রজাপতির ৩৩% হ্রাস পেয়েছে। কীটপতঙ্গের বৈচিত্র্য ও প্রাচুর্যের সঙ্গে কীটপতঙ্গের সংখ্যার হ্রাস বোঝার মধ্যে বিস্তর ফাঁক রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পরাগায়নকারী যেমন ওড়িশায় দেশীয় মৌমাছির সংখ্যা ৮০% কমেছে বলে অনুমান করা হয়েছে। তবে কিছু পরাগায়নকারী সম্প্রদায় যেমন মাছি (ডিপ্টেরা), প্রজাপতি, মথ (লেপিডোপ্টেরা), এবং বিটলস (কোলিওপ্টেরা)- র ওপর স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
তবে শীর্ষ শিকারী বাঘের সংখ্যা বেড়েছে, ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউটের অল ইন্ডিয়া টাইগার এস্টিমেশন অনুসারে ৩৬২৮ থেকে বাঘের সংখ্যা ৩৯২৫ টা হয়েছে। মধ্য ভারতের শিবালিক পর্বত, মধ্যপ্রদেশের গঙ্গার অববাহিকা, উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্রে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।
জীববৈচিত্র্যের হ্রাস, প্রকৃতির ক্ষতি বেশি হলে তা টিপিং পয়েন্টে চলে যাবে, অর্থাৎ তা আর পুনরুদ্ধার করা যাবেনা। যেমন তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইতে শহরাঞ্চল বৃদ্ধি পাওয়াতে জলাজমির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। মাটির নীচের জলের পরিমাণ কমে যাওয়াতে প্রাণীরা খরা, বন্যার মুখোমুখি হচ্ছে, যা তাদের আরো বিপন্ন করে তুলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =