জীবনের গতিবেগ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে একাকিত্বের সমস্যা। রাস্তাঘাটে ভিড়ের অভাব নেই, তবুও একা বহু মানুষ। এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও সবচেয়ে বড়ো সমস্যা-একাকিত্ব। আর সেই একাকিত্বের শিকার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির এক নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকার চেয়েও একাকিত্ব, ঘুমের বড়ো শ্ত্রু। পর্যাপ্ত ঘুম সুস্থ জীবনের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি। ঘুমের সমস্যা বাড়তে থাকলে দেখা দিতে পারে স্থায়ী অনিদ্রার সমস্যাও। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘ইনসমনিয়া’। আজকের দিনে অনিদ্রা এবং একাকিত্ব উভয়ই গুরুতর জনস্বাস্থ্য উদ্বেগের বিষয় এবং সম্প্রতি তা আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মহামারী পর্যায়ে চলে গেছে। গবেষকরা ১০০০ জন অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ করে দেখেন তরুণ তরুণীরা সারাদিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় মোবাইল বা কম্পিউটরের সামনে কাটালে তাদের মধ্যে অনিদ্রার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবার এদের মধ্যে ৩৫%-এর একাকিত্বের সমস্যা রয়েছে। বাকি ৬৫% তরুণ তরুণীদের তুলনায় এদের মধ্যে অনিদ্রার উপসর্গ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
একাকিত্ব এবং তার বিপদ নিয়ে চর্চা দীর্ঘ দিনের। একাকিত্বের ফলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। তৈরি করে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, হৃদরোগ, স্মৃতিভ্রংশ, অনিদ্রা। গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত স্ট্রেস বা চাপ অনেকসময় যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসকদের অনেকাংশের দাবি কোভিডের আগে থেকেই একাকিত্ব গ্রাস করেছে অর্ধেকেরও বেশি যুবক যুবতীদের। এর সঙ্গে অতিরিক্ত ধূমপান যুক্ত হয়ে তাদের অকালমৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাছাড়াও, যারা প্রায়শই একাকী বোধ করে তাদের মধ্যে মনমরাভাব বা বিষণ্ন থাকার সম্ভাবনা দ্বিগুণের বেশি। ইউ.এস. সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ ছাত্রছাত্রীদের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত। ফলে তাদের বৌদ্ধিক সক্ষমতা কমে যায়, মেজাজ নিয়ন্ত্রণে থাকে না, বিপাকে সমস্যা হয়। সুস্থ থাকাই দায় হয়ে ওঠে। অনেকেই মনে করেন একাকিত্বের প্রধান কারণ প্রযুক্তি, ডিজিটাল নির্ভরতা। স্ক্রিন টাইম অনিদ্রার লক্ষণ বাড়িয়ে তোলে এবং তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তাই ইনসমনিয়ার ঝুঁকি কমাতে দিনে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ঘন্টা বা তার কম সময়ের জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গবেষকরা সতর্ক করছেন অনিদ্রা মোকাবিলার সময় স্ক্রিন টাইমের থেকে একাকিত্বকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।