সন্তানকে কতটা শাসন করবেন আর কতটা প্রশ্রয় দেবেন, আজকাল তা বুঝে ওঠা দায় হয়েছে। এখনকার ছোটোরা বয়স অনুপাতে অনেক বেশি পরিণত। ছোটো থেকেই তারা ইন্টারনেটে নানা জিনিস দেখছে, শিখছে। অনেকক্ষেত্রেই তাদের আচরণ বেশ খারাপ। ঠিক এই জায়গা থেকেই শিশুদের বার করে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন এখনকার বাবা-মায়েরা। অনেকসময় ছোটো ছোটো বাচ্চাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক বাবা-মা হুমকির আশ্রয় নেন, খেলনা কেড়ে নেন, কোনো জিনিস না দেওয়ার হুমকি দেন বা ভয় দেখান। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান হেলথ সিএস মট চিলড্রেন’স হসপিটালের উদ্যোগে আয়োজিত বাচ্চাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ন্যাশনাল পোল অনুসারে – তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের অভিভাবকরা বাচ্চার খারাপ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে ভয় দেখান, আবার প্রতি চারজন অভিভাবকদের মধ্যে একজন তাদের সন্তানকে কোনো উপহার কিনে না দেওয়ারও হুমকি দেন। অনেকসময় আবার অভিভাবক কোনো কাজ বা স্থান ছেড়ে যাওয়ারও ভয় দেখান, খেলনা কেড়ে নেন বা তার পছন্দের খাবার না দেওয়ার হুমকি দেন। প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবামায়েরা বাচ্চাদের ভোলাতে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের পছন্দের জিনিস ঘুষ হিসেবেও দেন। শিশু বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মতে শৃঙ্খলা শিশুদের শিখতে সাহায্য করে কোন আচরণ উপযুক্ত, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, ঠিক বা ভুলের মধ্যে পার্থক্যটাই বা কী? শিশুদেরকে ভয় দেখালে বা হুমকি দিলে বাবামায়েরা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, আর তা সাধারণত কার্যকর হয় না। ইতিবাচক এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ মনোভাব শিশুদের আচরণকে রূপ দিতে পারে। গবেষকদের মতে এক থেকে দু বছর বয়সী শিশুদের মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া বা তাদের ভুলিয়ে দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর। এই অল্প বয়সী শিশুরা সর্বদা চায় তাদের চারপাশ অনুসন্ধান করতে। তাই তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের আচরণ বা ব্যবহার ইচ্ছাকৃত নয় বলেই মনে হয়। কিন্তু দু বছর বয়সের পর থেকে শিশুরা বুঝতে পারে যে তাদের কাজের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তারা এই প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য পরীক্ষা করতে থাকে। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের বাবামায়েরা তাদের বাচ্চাদের সতর্ক করতে পারেন, দৃঢ়ভাবে বারণ করতে পারেন, এবং তাদের একটা সময়সীমা ধার্য করে দিতে পারেন। গবেষকদের মতে এই বয়সী শিশুরা যদি রেগে গিয়ে জল ফেলে দেয় তবে সে ক্ষেত্রে জল পরিষ্কার করতে দেওয়াই হবে তাদের উপযুক্ত শাস্তি, এবং সে শাস্তি দিতে হবে তৎক্ষণাৎ। গবেষকরা আরও জানান যেহেতু প্রতিটি শিশুই আলাদা তাই তারা ভিন্ন ভিন্ন শৃঙ্খলা পদ্ধতিতে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। অভিভাবকদের তাই অনেক নমনীয় হতে হবে। শিশু বড়ো হওয়ার সাথে সাথে শৃঙ্খলার প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়াও পরিবর্তিত হবে, তাই অভিভাবকদের নিজেদের মন খোলা রাখতে হবে। শিশুদের ত্রুটি সংশোধন করে তাদের ক্ষেত্র বিশেষে প্রশংসা বা পুরস্কৃত করতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তবেই ধীরে ধীরে শিশুদের আত্মসম্মান গড়ে উঠবে।