দেহের প্রতিরোধতন্ত্র ক্ষতিকর জীবাণুগুলোকে প্রতিহত করে, কিন্তু উপকারী জীবাণুদের আক্রমণ করে না। স্ট্যাফিলোকোকাস এপিডার্মিস নামক নিরীহ জীবাণুটি মানুষের ত্বকের স্বাভাবিক বাসিন্দা, এরা কোনো ক্ষতি করে না। ইঁদুরদের গায়ে সেই জীবাণুর বসতি গড়ে তুলে সুনির্দিষ্ট রোগ-প্রতিরোধী ‘টি-সেল’ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এগুলি দেহের আঞ্চলিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণুতত্ত্ববিদ মাইকেল ফিশ্চবাখ জানিয়েছেন, সারা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে-থাকা ত্বকের এইসব বাসিন্দাদের প্রতি দেহের প্রতিক্রিয়া যে এতটা শক্তিশালী তা আগে বোঝা যায়নি। একই সঙ্গে মেরিল্যান্ডের বেটেস্ডায় ইন্টা গ্রিবোলিংকার গবেষণা থেকে দেখা গেছে, ওই জীবাণুটি প্রতিরোধতন্ত্রের ‘বি-সেল’কেও সক্রিয় করে তোলে। ত্বকে এই বি-সেলের তৈরি অ্যান্টিবডিগুলো অন্তত ২০০ দিন সক্রিয় থাকে। এর জন্য তাদের আগে থেকে অন্য কোনো জীবাণুর সংসর্গ করার দরকার হয় না। এমনকি প্রতিরোধী কোষ তৈরির কারখানা লিম্ফ নোডগুলো অকেজো হয়ে থাকলেও ত্বক পারছে প্রতিরোধী সাড়া জাগিয়ে তুলতে। ত্বকে ওই জীবাণু উপস্থিত থাকলে বিশেষ কাজের উপযোগী প্রতিরোধী কাঠামো সহজে গড়ে ওঠে। ওই কাঠামোগুলি টি আর বি সেলকে টেনে আনে, যার ফলে বেশি পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ভ্যাকসিনের কাজ হল প্রতিরোধতন্ত্রকে তালিম দেওয়া, যাতে প্রতিরোধতন্ত্র তার শত্রু জীবাণুটিকে চিনে রাখে আর পরে ওই জীবাণু আবার আক্রমণ করা মাত্র তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। গবেষকরা দেখতে চাইলেন, নিরীহ ওই স্ট্যাফিলোকোকাস এপিডার্মিস জীবাণু থেকে শরীরে জেগে-ওঠা প্রতিরোধী সাড়াকে শত্রু জীবাণুদের দিকে লেলিয়ে দেওয়া যায় কিনা। দেখা গেল, প্রচলিত ভ্যাকসিনগুলির কায়দাতেই এই জীবাণু অ্যান্টিবডি তৈরি করছে। এর চরিত্রে কিছু পরিবর্তন এনে গবেষকরা ইঁদুরদের রক্তপ্রবাহে ও শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে (যেমন নাকের ভিতরের ত্বকে) রোগপ্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন। ইঁদুরদের দেহে মারাত্মক মাত্রায় টেটানাস অধিবিষ ঢুকিয়ে দিয়ে দেখা গেছে, ওই রোগ-প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়ার সুবাদে তারা বেঁচে গেছে। আশা করা যায়, স্ট্যাফিলোকোকাস এপিডার্মিস জীবাণুর কাঠামো কিছুটা বদলে নিয়ে সেটাকে একটা মলমের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে আর সেই মলম ত্বকে মালিশ করলেই কাজ হবে। দামেও শস্তা হবে। এটি প্রয়োগের জন্য চিকিৎসকের দরকার হবে না, চিকিৎসা-পরিচর্যার সহকারীরাই এটি প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে তার আগে জানতে হবে, মানুষের দেহেও ওই জীবাণুর কাজ ইঁদুরদের দেহের মতোই জোরালো হবে কিনা। এ বিষয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষার ফল আশাব্যঞ্জক হলেও এখনও একেবারে সুনিশ্চিত রায় দেওয়ার মতো ফল মেলেনি।