বিজ্ঞানীরা এক সময়ে বিশ্বাস করতেন আমাদের প্রতিবেশী গ্রহ, শুক্র প্রাচীন অতীতে আমাদের গ্রহের মতো ছিল। নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি দলের গবেষণায় জানানো হয়েছে, পৃথিবীর যমজ গ্রহ শুক্রে কোনো সময়ে জল ছিল না, ফলে এই গ্রহ কোনোদিনও বাসযোগ্য ছিল না। একে পৃথিবীর “দুষ্ট যমজ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পৃথিবীর সমান ভর সূর্য থেকে দূরত্ব পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও, অন্য কোনো দিক থেকে এই গ্রহ আমাদের যমজ নয়। কারণ, এই গ্রহের পরিস্থিতি মোটামুটি নারকীয়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা শুক্রের বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। বর্তমানে, শুক্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ১০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট, এই জ্বলন্ত গরম গ্রহের পৃষ্ঠে সীসার মতো ধাতু গলে যাবে। তার সাথে রয়েছে সালফিউরিক অ্যাসিডের মেঘ।
এই চরম অবস্থা থাকলেও কিছু বিজ্ঞানীর তত্ত্ব অনুযায়ী শুক্র কোটি কোটি বছর আগে বাসযোগ্য ছিল। তার কারণ তারা জীবনের প্রাথমিক শর্ত জলের উপস্থিতির কথা বলেন। ৪৬০ কোটি বছর যাবত শুক্র কীভাবে বিবর্তিত হয়ে চলেছে তার দুটো প্রাথমিক ধারণা রয়েছে। একটা ধারণা অনুযায়ী এই গ্রহ একসময়ে তরল জল ধারণ করার মতো শীতল ছিল। এই তত্ত্ব অনুসারে, আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে এই পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে শুক্র ক্রমশ উত্তপ্ত থেকে উত্তপ্ততর হয়ে উঠেছে, যেখানে জল আর তরল অবস্থায় থাকতে পারে না। অন্য তত্ত্ব বলছে, শুক্রে কখনই তরল জল থাকতে পারেনি, কারণ এই গ্রহ জন্ম থেকেই উষ্ণ। দুটো গবেষণার ভিত্তিই ক্লাইমেট মডেল। বর্তমান গবেষণা এই জলহীন বিকল্প তত্ত্বের সমর্থক। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের বেশিরভাগই জল-সমৃদ্ধ বাষ্প, কারণ পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগে প্রচুর জল রয়েছে। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন শুক্রের আগ্নেয়গিরির গ্যাসের মধ্যে ৬%-এর বেশি জলীয় বাষ্প নেই। এই শুষ্ক অগ্ন্যুৎপাত থেকে গবেষকরা অনুমান করছেন, শুক্রের অভ্যন্তর এতটাই শুষ্ক যে তার পৃষ্ঠের মহাসাগরে সরবরাহ করার জন্য পর্যাপ্ত জল ছিল না।
নাসার দাভিঞ্চি মিশন ২০২৯ সালের জুনে চালু হবার কথা। এর দু বছর পরে এটা শুক্র গ্রহে পৌঁছোবে। শুক্র গ্রহের কাছে গেলে প্রোব নামিয়ে তা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করবে। শুক্র গ্রহ নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর পেতে হয়তো মানুষকে ততদিন অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের সবচেয়ে কাছাকাছি গ্রহ হওয়া সত্ত্বেও, শুক্র এক্সোপ্ল্যানেট বিজ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা বিজ্ঞানীদের এমন গ্রহ অন্বেষণ করার সুযোগ দেয় যা পৃথিবী থেকে একেবারে ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে।