অনেক কাল ধরেই পদার্থবিজ্ঞানীরা বলে আসছিলেন যে ডার্ক ম্যাটার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসবে নিউট্রিনো কুয়াশা। নভেম্বর মাসে ফিজিক্যাল রিভিয়ু লেটার্স –এ প্রকাশিত দুটি গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, সে-ভবিষ্যদ্বাণী মিলেছে। ‘নিউট্রিনো কুয়াশা’ হল সেইসব নিউট্রিনো কণার সংকেত-সমষ্টি যারা নাকি ‘ডার্ক ম্যাটার’ থেকে নির্গত। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যত পদার্থ আছে তার বেশি ভাগই অপরিচয়ের অন্ধকারে লুকিয়ে আছে। তাই ডার্ক ম্যাটারকে অনেকে লুকিয়ে-থাকা বা হিসেব-বহির্ভূত পদার্থ (হিড্ন না মিসিং ম্যাটার) বলেন। আর নিউট্রিনো হল এমন এক চার্জহীন কণা যা আলোকের সমান বেগেই চলে। প্রতি সেকেন্ডে হাজার হাজার কোটি নিউট্রন কণা পৃথিবী ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়, কেউ টেরটি পায় না। কারণ তারা কোনো সাধারণ পদার্থর সঙ্গে কার্যত কোনো ক্রিয়াই করে না। এদের বেশির ভাগই কার্যত ভরহীন। সূর্যের ভেতরকার ফিউশন প্রক্রিয়া থেকে এদের জন্ম। সূর্য থেকে নির্গত বোরন-৮ নিউট্রিনোর জন্য সন্ধান চালাচ্ছিলেন চীন আর ইতলির দুই দল বিজ্ঞানী। এ জন্য তাঁরা ব্যবহার করছিলেন তরল জেনন ডিটেক্টর। জেনন কেন্দ্রকের কোনো বিশেষ অংশের বদলে গোটা কেন্দ্রকটির ওপর নিউট্রিনো আছড়ে পড়লে তা থেকে কেমন সংকেত বেরোয় তা নিয়ে গবেষণা করছিলেন তাঁরা। ডার্ক ম্যাটারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অনুমিত কিছু ভরযুক্ত কণা জেনন পরমাণুর কেন্দ্রক-কে ঘা মারলে যেসব সংকেত বেরিয়ে আসে, এই সংকেতগুলো তারই অনুরূপ, যেন তাদেরই নকল। ইতালীয় দলটি একসার মেশিন-লার্নিং প্রকৌশল ব্যবহার করে এমন ১১টি পরিঘটনা ধরতে পেরেছেন। আর অন্য এক ধরনের অতি-সংবেদী পরীক্ষা চালিয়ে চীনের দলটি পেয়েছেন এমন ৭৫টি পরিঘটনার প্রমাণ। তাঁদের পরীক্ষায় নিউট্রিনোদের ক্ষীণতম সংকেতও ধরা পড়েছে। তার অর্থ, সূর্য থেকে, কিংবা কাছাকাছি অন্য কোনো গ্যালাক্সির নক্ষত্র থেকে উড়ে-আসা সব রকমের নিউট্রিনোকেই এইসব পরীক্ষা মরফত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু অতি-সংবেদনশীলতার আবার সমস্যাও আছে। তাঁরা যেসব উপাত্ত (ডেটা) সংগ্রহ করেছেন তার মধ্যে ইলেকট্রন ও অন্য অনেক কণার বিকিরণের সংকেতও ঢুকে পড়ে ছবিটাকে আবছা করে তুলেছে। এইসব অপ্রয়োজনীয় সংকেত ডার্ক ম্যাটার সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা গঠন করার পরিপন্থী। তাহোক, যতদিন না এই নিউট্রিনো কুয়াশা একটা বড়োসড়ো সমস্যা হয়ে উঠছে ততদিন তা থেকে অনেক কিছু শিখে নিতে দোষ কী?