১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটা চুল্লি বিস্ফোরণের পর এর আশেপাশের এলাকায় তেজস্ক্রিয়তা এত বেড়ে গেছে যে ইউক্রেনের নিকটবর্তী শহর প্রিপিয়াটে সরকারী অনুমোদন বাদে প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এখানকার পরিবেশে জমা হওয়া তেজস্ক্রিয় পদার্থ জীবদের জন্য বিপজ্জনক। মারাত্মক মাত্রায় আয়ন বিকিরণে প্রাণীদের পরিব্যাপ্তি, ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। এই অঞ্চল মানুষের বাসস্থানের জন্য নিরাপদ হতে হাজার হাজার বছর সময় লাগতে পারে। মানুষের এই অঞ্চলে প্রবেশ আটকানো গেলেও পশুপাখিদের দূরে রাখা যাবেনা। তারা নিজেদের মর্জির মালিক, নিজের ইচ্ছায় যেখানে সেখানে গমন করে। মনুষ্য বর্জিত এই ২৬০০-বর্গ কিলোমিটার তেজস্ক্রিয় অঞ্চল সেই সময় থেকে প্রাণীর অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অন্যান্য তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত স্থান থেকে এখানকার প্রাণীদের স্পষ্ট জেনেটিক পার্থক্য রয়েছে।
কিন্তু চেরনোবিল এক্সক্লুশন জোন (CEZ) এর উচ্চ তেজস্ক্রিয় পরিবেশে জীবনযাপনকারী মাইক্রোস্কোপিক কৃমি সম্পূর্ণরূপে বিকিরণের ক্ষতি থেকে মুক্ত বলে গবেষকরা মনে করছেন। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সোফিয়া টিনটোরির নেতৃত্বে জীববিজ্ঞানীদের দল এলাকা থেকে নেমাটোড সংগ্রহ করে দেখেন, কৃমির জিনোমে ক্ষতির কোনো চিহ্ন নেই। নেমাটোডের জিনোম বেশ সরল তাদের আয়ু স্বল্প। তাই অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক প্রজন্ম অধ্যয়ন করা সম্ভব। জৈবিক বিকাশ, ডিএনএ মেরামত, টক্সিন প্রতিক্রিয়া এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধ্যয়নের জন্য তাদের মডেল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গবেষকরা তেজস্ক্রিয় ধূলি থেকে বাঁচতে প্রতিরক্ষামূলক স্যুট পরে চেরনোবিলের পচা ফল, পাতার আবর্জনা, মাটি থেকে শত শত নেমাটোড সংগ্রহ করেন, তারপর গেইগার কাউন্টার নামে যন্ত্র ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে বিকিরণ পরিমাপ করেছেন। ৩০০ কৃমির মধ্যে ১৫ টা কৃমির জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছিল। তারপর পৃথিবীর অন্য ৫ টা প্রান্ত ফিলিপিন্স, জার্মানি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, মরিশাস, অস্ট্রেলিয়ার কৃমিদের জিনোমের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল।
চেরনোবিলের কৃমিদের অন্যান্য কৃমির তুলনায় জিনগতভাবে একে অপরের সাথে বেশি মিল ছিল। এদের নমুনায় ভৌগোলিক দূরত্বের সঙ্গে জেনেটিক পার্থক্যের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তেজস্ক্রিয় বিকিরণযুক্ত পরিবেশের জন্য ডিএনএ-তে ক্ষতির লক্ষণ ছিল না। চেরনোবিলের কৃমির জিনোম বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, পরিব্যাপ্তি হওয়া সম্ভব এরকম পরিবেশ থেকেও কৃমির সেধরনের ক্রোমোসোমাল পুনর্বিন্যাসের কোনো প্রমাণ নেই। ডিএনএ কতটা ক্ষতি সহ্য করতে পারে তা নির্ধারণ করতে গবেষকরা ২০টা কৃমির স্ট্রেনের বংশধরদের উপর পরীক্ষা চালান। প্রতি স্ট্রেনের সহনশীলতার মাত্রা ভিন্ন ছিল। এর থেকে গবেষকরা দেখবেন, কিছু মানুষ কেন ক্যানসারে বেশি সংবেদনশীল। এই গবেষণা থেকে ডিএনএ মেরামতের পদ্ধতি সম্পর্কেও কিছু ধারণা আসতে পারে যা একদিন মানুষের ওষুধের জন্য কাজে লাগতে পারে। এই গবেষণা পিএনএএস জার্নালে প্রকশিত হয়েছে।