শেখার কোন শেষ নাই ! শেখার চেষ্টা বৃথা তাই? প্রসঙ্গঃ ‘ফোর স্টেজেশ অফ লার্নিং মডেল’

শেখার কোন শেষ নাই ! শেখার চেষ্টা বৃথা তাই? প্রসঙ্গঃ ‘ফোর স্টেজেশ অফ লার্নিং মডেল’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

মানুষ প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখে চলেছে। কখনও সজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় শিখছে কখনও অবচেতনে, অজান্তে শিখছে। আসলে, আমরা উপলব্ধি করি বা না করি, আমরা সর্বদা নতুন জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করে চলেছি আর আমাদের পারিপার্শ্বিকের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছি। তবে এই শেখার মাত্রা বা প্রয়োজনীয়তা সবসময় একরকম হয় না। কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে শিখতে এবং সেই শেখাকে একেবারে আত্মস্থ করতে বিশেষ কিছু শিক্ষা পদ্ধতির প্রয়োজন হয় বইকি ! এই শিক্ষণ পদ্ধতিগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখ্য, ‘ফোর স্টেজেশ অফ লার্নিং মডেল’- শেখার চার ধাপ।

১৯৭০ সালে, নোয়েল বার্চ প্রবর্তন করেন এই মডেলটির। তবে মডেলের উৎপত্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত। যেমন- কিছু প্রমাণ বলে, মডেলটি প্রথম, মার্টিন এম. ব্রডওয়েল ১৯৬৯ সালে একটি প্রবন্ধে ব্যবহার করেছিলেন। আবার কেউ কেউ আব্রাহাম মাসলোকে এই মডেলের সুত্রধার মেনেছেন। আবিস্কারক নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ থাকলেও, মডেলটির বয়স বাড়লেও, এর প্রাসঙ্গিকতা আজও একই আছে। কোন কিছু শেখার সময় আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে নতুন নিউরাল পথ তৈরি করে, তা বোঝাতে স্নায়ুবিজ্ঞানে, এখনও মডেলটির প্রসঙ্গ ওঠে। উপরন্তু, কার্যকর শেখার ক্ষেত্রে স্ব-সচেতনতা এবং প্রতিফলিত অনুশীলনের গুরুত্ব নিয়ে তাঁবর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলিতে এই মডেলটির ব্যবহার বাড়ছে।

মডেল অনুযায়ী ‘শেখা’র এই চার পর্যায় বা ধাপগুলি, যথাক্রমে – অচেতন অক্ষমতা, সচেতন অক্ষমতা, সচেতন যোগ্যতা এবং অচেতন যোগ্যতা।

অচেতন অক্ষমতা- এই পর্যায়ে, কোন নির্দিষ্ট বিষয়, বিষয়ের নির্দিষ্টতা সম্পর্কে আপনি যে জানেননা, তা নিয়ে আপনি অজ্ঞ। এই অজ্ঞতা যে কোন কারণে হতে পারে। বিষয়টি আগে হয়ত আপনার কোন দরকারে আসেনি বা ধরুন নিজেকে আদপে পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে আপনি যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন না। ফলে, কোন কিছু শিখতে গেলে প্রথমেই যা লাগে তা হল, যা নিয়ে শিখবো সেই বিষয়ে আমাদের জ্ঞান বা দক্ষতার মধ্যে ফাঁক রয়েছে কিনা তা বোঝা।
করণীয়: ফিডব্যাক নিন। আত্ম-প্রতিফলন করুন। এমন বিষয়গুলি খুঁজুন যেখানে আপনার উন্নতির প্রয়োজন হতে পারে। দরকারে অন্যের সাহায্য নিন।

সচেতন অক্ষমতা পর্যায়ে, আমরা আমাদের নিজস্ব জ্ঞান বা দক্ষতার অভাব সম্পর্কে সচেতন হই। কিন্তু আমরা এখনও কাঙ্ক্ষিত আচরণ বা দক্ষতায় দক্ষ হয়ে উঠতে পারিনা। যদি আমরা, গাড়ি চালানো শেখাকে উদাহরণ হিসাবে দেখি, তাহলে এই পর্যায়ে হয়ত আপনি গাড়িতে উঠতে পারেন, ইঞ্জিন চালু করতে পারেন। কিন্তু দেখলেন, গাড়ি এগোনোর চেষ্টা করার সাথে সাথেই তা থেমে যাচ্ছে। এখন, আপনি বুঝতে পারছেন যে, এটি দেখতে যতটা সোজা ছিল ততটা সহজ নয়। গাড়িটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে, আপনাকে নতুন দক্ষতা শিখতে হবে এবং আরও নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা হতাশাজনক পর্যায় হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি অভিভূত বা নিরুৎসাহিতও হতে পারেন। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার, এই পর্যায়টি শেখার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে, একটি অপরিহার্য অংশ। আমাদের দুর্বলতা স্বীকার করে, দক্ষতার উন্নতি ও বিকাশের জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করলেই আমরা শেখার দিকে এগিয়ে যাবো।
করণীয়: লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। শেখার বিষয়কে ছোট ছোট ধাপে ভেঙ্গে ফেলুন। ধৈর্য ধরুন।

সচেতন যোগ্যতা অর্থাৎ যোগ্যতা যেখানে সচেতনতার অধীনে। আপনি আপনার নতুন দক্ষতা শিখছেন বা শিখলেন। বার বার প্রয়োগ করতেও শুরু করলেন। এই সময় আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনার সচেতনতা বাড়তে শুরু করবে। এর সাথে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তবে যোগ্যতা অর্জন করতে, আপনাকে বার বার এটিতে বেশ বুদ্ধি, স্মৃতি, সচেতনতাকে বারংবার কাজে লাগাতে থাকতে হবে। মানে, কী করছেন তা নিয়ে এখনও ভাবতে হচ্ছে এবং মনোনিবেশ করতে হচ্ছে। বার বার ক্লাস এবং অনুশীলন করতে করতে আপনি, স্বয়ংক্রিয় হয়ে আপনার ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন।
করণীয়: প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস আর প্র্যাকটিস !

কিন্তু পাকা ড্রাইভার হতে পথ এখনও অনেক বাকি…
শেখার চতুর্থ এবং শেষ পর্যায় হল অচেতন যোগ্যতা। এই পর্যায়ে, দক্ষতা বা আচরণ সচেতন প্রচেষ্টা বা মনোযোগ ছাড়াই আমরা করে ফেলতে পারছি। যেমন, গিয়ার বদল,লেন পরিবর্তন করা সবই বিশাল পরিশ্রম ছাড়াই সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে অনায়াসে। অনুশীলনটা আলাদা করে ‘অনুশীলন’ মনে হচ্ছে না বরং এটা আপনার রুটিন বা দৈনন্দিন কাজের অংশ হয়ে উঠেছে।
করণীয়: নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন। পরীক্ষা করুন।

শেখার এই চার ধাপ, ব্যক্তিগত বিকাশের জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো। যে কোন বিষয়কে আয়ত্ত করতে এই ধাপগুলো বোঝা এবং নিজেদের জীবনে এগুলি প্রয়োগ করার মাধ্যমে, আমরা আরও কার্যকর শিক্ষার্থী হয়ে উঠতে পারি এবং আমাদের আচরণ এবং অভ্যাসগুলিতে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারি।