বায়ুতে উপস্থিত আড়াই মাইক্রোমিটারের চেয়ে কম ব্যাসওয়ালা কণারা মানুষের ফুসফুস আর রক্তপ্রবাহর মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে। আমাদের দেশের মানুষের সামনে এটা একটা মস্ত বিপদ রূপে সূচিত হয়েছে। মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে এই ধরণের কণার যোগসূত্র প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৯ এই দশ বছরের মধ্যে ভারতের ৬৫৫টি জেলার মানুষকে নিয়ে কারোলিন্স্কা ইন্সটিটিউটের চালানো একটি সমীক্ষা থেকে এই কথা উঠে এসেছে। সমীক্ষা ও গবেষণা থেকে দেখা দেছে, ওই পর্বে প্রায় ৩৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই বীভৎস বায়ুদূষণ থেকে, যা ভারতের নিজের স্থিরীকৃত নিরাপদ বায়ু-গুণ মাত্রার (প্রতি ঘন মিটার পিছু ৪০ মাইক্রোগ্রাম) চেয়েও বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নিরাপদ বায়ু-গুণ মাত্রাটি হল ৫ মাইক্রোগ্রাম। সেই মানদণ্ডে হিসেব করলে তো এই মৃত্যু সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১ কোটি ৬৬ লক্ষ, যেটা ওই সমীক্ষা-পর্বের যাবতীয় মৃত্যুর প্রায় ২৫%। কোনো কোনো অঞ্চলে তো মেপে দেখা গেছে প্রতি ঘন মিটার পিছু দূষণকণার মাত্রা ১১৯ মাইক্রোগ্রামে গিয়ে ঠেকেছে – যা ভারতের ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ঢের বেশি। গবেষকদের মতে, এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভারতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার যে-নির্দেশিকা বর্তমানে জারি আছে তা যথেষ্ট নয়। দূষিত পদার্থ নির্গমনের মাত্রা কমাতে হলে চাই আরো কড়া নিয়মাবলি ও ব্যবস্থা। বায়ুর গুণমান বাড়ানোর জন্য ২০১৭ থেকে ভারত সরকার একটা জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালু রেখেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তা সত্ত্বেও বাতাসে আড়াই মাইক্রোমিটারের চেয়ে কম ব্যাসওয়ালা কণার মাত্রা বেড়েই চলেছে। এই কণাগুলি শত শত কিলোমিটার দূরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই শুধু দূষিত কণার নির্গমন কমানোই যথেষ্ট নয়, তার ব্যাপক প্রসারকেও রোধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ভারত, সুইডেন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইজ্রায়েল আর ইতালির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্মিলিতভাবে এই সমীক্ষা চালিয়েছেন। .সম্প্রতি দ্য লান্সেট প্ল্যানেটারি হেলথ পত্রিকায় তাঁদের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।